রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার বাগান থেকে তুলে আনা আনারসসহ অন্যান্য ফল যাতে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় থাকে এবং গুণমানের কোনো হেরফের না ঘটে, সে জন্য উদ্যান বিভাগ অত্যাধুনিক ‘কোল্ডস্টোরেজ’ স্থাপন করছে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনরসসহ নিয়ে আসা অন্যান্য ফলমূল এখানে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় রাখা হবে।
ত্রিপুরা সরকারের উদ্যান বিভাগের অধিকর্তা অরুন দেববর্মা বাংলানিউজকে জানান, এগুলো সৌরবিদ্যুতে চলবে। কারণ দেশজুড়ে প্রথাগত বিদ্যুতের সঙ্কট রয়েছে, তাই এখন সৌরবিদ্যুৎসহ অন্যান্য বিকল্প শক্তির দিকে ঝুঁকছে গোটা বিশ্ব। সৌরবিদ্যুৎ নির্ভরশীল কোল্ডস্টোরেজ তৈরি হলে এ থেকে নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া আমাদের গোটা ভারতসহ ত্রিপুরা রাজ্য আদ্র-ক্রান্তিয় অঞ্চলে অবস্থিত, তাই সারা বছর পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায়। ফলে সোলার প্যানেল থেকে প্রয়োজনীয় মাত্রায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
তিনি আরো জানান, রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ৬ কিমি দূরে নাগিছড়া এলাকায় উদ্যান বিভাগের গবেষনাকেন্দ্রে পরীক্ষামূলক সৌরবিদ্যুৎ-ভিত্তিক কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তিনটি কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন করা হবে। একেকটির ফল ধারণ ক্ষমতা ছয় মেট্রিক টন। এগুলো ঠিকভাবে কাজ করলে রাজ্যের অন্যান্য এলাকাগুলোতেও এমন কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন করা হবে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। এক একটি কোল্ডস্টোরেজ স্থাপনে প্রায় বিশ লাখ রুপি করে খরচ হচ্ছে। এগুলোর তৈরি করেছ ভারত সরকারের ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট ফর সোলার এনার্জি। এর সোলার প্লেটগুলো এসেছে, গুরুগ্রাম থেকে ও বাকি যন্ত্রাংশ এসেছে নয়ডা থেকে।
তিনি বলেন, রফতানি করার জন্য কাঁচা ফলই শুধু এখানে রাখা হবে এমনটা নয়। বরং বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা ফল একদিনে বিক্রি না হলে, চাষী তা এখানে রাখতে পারবেন এবং পরবর্তী সময় বিক্রি করতে পারবেন।
উদ্যান বিভাগ আগামী বছর নাগাদ রাজ্যে একটি অত্যাধুনিক প্যাকেজিং কেন্দ্রও স্থাপন করবে। ভারত সরকার ২০২০সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুন করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ বলে জানান তিনি।
অপর দিকে ত্রিপুরা সরকারের উদ্যান বিভাগের সহঅধিকর্তা ডা: দীপক বৈদ্য এই কোল্ডস্টোরেজের কার্যকারিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, মূলত তিনটি বিষয় মাথায় রেখে অধিদফতর সোলারভিত্তিক কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন করছে। এভাবে হলে এই প্রযুক্তিতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। দ্বিতীয়ত বিদ্যুতের জন্য কোনো খরচ আসবে না এবং বাগান থেকে ফল তুলে আনার পর থেকে ফল বিক্রয়কেন্দ্রে পাঠানো পর্যন্ত তাপমাত্রার কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটবে না। এতে ফলের গুনগত মান বা স্বাদে বিন্দুমাত্র তারতম্য ঘটবে না। রাজ্যের উৎপাদিত ফলের গুণগত মানে কোনো ধরনের পরিবর্তন ছাড়া এগুলো বিক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়াই উদ্যান দফতরের লক্ষ্য।
কোল্ডস্টোরেজে সর্বনিম্ন ৪ ডিগ্রী সেললিয়াসে ফল সংরক্ষণ করা যাবে। ফলের প্রকারভেদে তাপমাত্রার বাড়ানো-কমানো যাবে। নতুন এই কোল্ডস্টোরেজ নিয়ে অধীদফতর খুব উৎসাহী ও আশাবাদী বলেও জানান ডা: দীপক বৈদ্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৯
এসসিএন/এমএমইউ