বর্জ্য জমার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে প্লাস্টিক। বর্তমান সময়ে বর্জ্যের মধ্যে অধিকাংশই থাকে এ প্লাস্টিক, যা ওজনে হাল্কা হলেও সহজে মাটির সঙ্গে মিশতে পারে না।
এসব বর্জ্য যে শুধু পৃথিবীর উপরিভাগকে দূষিত করছে তা নয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এই সব বর্জ্যের কিছু অংশ গলে খাল-বিল ও নদীর পানি হয়ে মিশছে সমুদ্রে। নষ্ট করছে জলীয় পরিবেশ ব্যবস্থাকে।
এক জরিপে দেখা গেছে, শুধু ভারতেই প্রতিদিন গড়ে এক লাখ মেট্রিক টন বর্জ্য সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে আগরতলা পুর নিগম এলাকায় দৈনিক প্রায় চার থেকে সাড়ে চার হাজার কেজি বর্জ্য সৃষ্টি হয়। তবে কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় এর বেশিরভাগই প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে জৈব সার।
আগরতলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জনমানবহীন ঘন সবুজে ভরা দেবেন্দ্র চন্দ্র নগর। এখানকার প্রায় ১৫ হেক্টর জায়গাজুড়ে রয়েছে ডাম্পিং গ্রাউন্ড। এখানে ফেলা হয় শহরের সব বর্জ্য। এর মধ্যে সাত হেক্টর জায়গায় প্রাচীর তুলে তৈরি করা হয়েছে আলাদা একটি কেন্দ্র। এ কেন্দ্রে এসব বর্জ্য ফেলে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তা থেকে জৈব সার তৈরি করা হচ্ছে।
এই বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের ইনচার্জের দায়িত্বে রয়েছেন আগরতলা পুর নিগমের কর্মী দীপঙ্কর দাস। তিনি বাংলানিউজকে জানান, এখানে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজে ১০ জন নারী কর্মীসহ ৩৩ জন স্থায়ী কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া বর্জ্য ভাগ করার জন্য রয়েছেন আরও কিছু অস্থায়ী কর্মী। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে আসা বর্জ্যগুলো এখানে ফেলা হয়। এরপর অস্থায়ী কর্মীরা কাচ, প্লাস্টিক ও লোহা জাতীয় পদার্থ এবং মেডিক্যাল বর্জ্যগুলো আলাদা করেন।
পরবর্তীতে পচনশীল বর্জ্যগুলোকে কিছু দিন যাবৎ স্তুপ করে রাখার পর মেশিনের সাহায্যে বিভিন্ন ধাপে প্রক্রিয়করণের মাধ্যমে তৈরি করা হয় জৈব সার। সবশেষে আগরতলা পুরনিগমের তত্ত্বাবধানে এই সারগুলো বাজারে বিক্রি করা হয়।
অন্যদিকে এখানে আসা প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্যের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার মাধ্যমে ক্রেতা নির্ধারণ করা হয়। পরে ক্রেতারা বাছাই করা প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো নিয়ে যান। যে সব অস্থায়ী কর্মীরা এখানে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার কাজ করেন, তারা এ কাজের জন্য কেজি প্রতি ১০ রুপি করে পান।
এখানে কর্মরত সব কর্মীদের মাসে একটি করে প্রতিষেধক ইঞ্জেকশনসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ দেওয়া হয় বলেও জানান দীপঙ্কর দাস।
এ কেন্দ্রে রাধা কর্মকার, অনিতা দেববর্মাসহ মোট ১০ জন নারী কাজ করেন। তারা বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাদের এ কাজ চলে। এ কাজে তাদের কোনো ধরনের সমস্যা হয় না।
প্রাথমিকভাবে বর্জ্যগুলো খোলা আকাশের নিচে ফেলা হলেও প্রক্রিয়াকরণের পুরো কাজই হয় সুবিশাল শেডের তলায়। তাই কোনোভাবেই এগুলো বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। তাছাড়া ডাম্পিং গ্রাউন্ড এলাকার আশপাশে নদী বা ছড়া না থাকায় পরিবেশ দূষণের কোনো আশঙ্কাও নেই।
এছাড়া চিনামাটি ও পাথরসহ যেসব কঠিন বর্জ্যপদার্থ থেকে জৈব সার তৈরি করা যায় না, সেগুলোর সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে ইট তৈরি করা হয়। তবে বিগত এক বছর ধরে মেশিন নষ্ট হওয়ায় ইট তৈরির কাজ বন্ধ আছে।
সব মিলিয়ে আগরতলা পুর নিগমের এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডটি যথেষ্ট পরিবেশবান্ধব, যা অন্যান্য ডাম্পিং গ্রাউন্ডগুলোর কাছে নজির সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
এসসিএন/এসএ