তার এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাঙালি। এই খুশি থেকে পিছিয়ে নেই ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষও।
তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক অর্থনীতিবিদ ক্ষুধা, দারিদ্র্র্য নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন কিন্তু সব গবেষকদের থেকে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের গবেষণা সম্পূর্ণ আলাদা। অন্যরা শুধু দরিদ্রতা এবং তার কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। অপরদিকে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় একদিকে যেমন বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের বিষয়ে গবেষণা করেছেন সেইসঙ্গে তিনি এই অবস্থা থেকে মানুষদের কি করে বের করে আনা যায় তার রাস্তাও দেখিয়েছেন। তিনি দারিদ্র্য বলতে শুধু খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবকেই বোঝাননি। তিনি মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, বিদ্যুৎ সংকট ইত্যাদি নানা বিষয়কে দরিদ্রতার সঙ্গে যুক্ত করে দেখিয়েছে।
ড. সোমা দেবনাথ উদাহরণ হিসেবে বলেন, এক জরিপে দেখা গেছে ভারতের ৭০ শতাংশ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ পরিষেবার আওতার বাইরে রয়েছে এটাও একটা দরিদ্রতা।
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় গবেষণার বিষয় অনুসরণ করলে ভারতের শুধু খাদ্য ও বাসস্থান নয় সার্বিক অবস্থার উন্নতি সম্ভব এবং তার এই গবেষণা গোটা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া দেশগুলির জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে মনে করেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদের মতে, গোটা বিশ্ব অর্থনীতির এই মডেলকে অনুসরণ করে দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত বর্তমানে আগরতলা মহিলা কলেজে সহকারী বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ড. শ্রীমন্ত রায়। তিনি জানান, বাঙালি হিসেবে অন্য একজন বাঙালির নোবেল প্রাপ্তির খবর নিঃসন্দেহে গর্বিত করে।
তবে তার মতে, কিছুদিনের ব্যবধানে ভারতবর্ষের দুইজন ব্যক্তি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এবং দু’জনেই অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন অথচ এই দেশে একটা বড় অংশের মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তাদের গবেষণালব্ধ বিষয়গুলি সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য কাজে লাগানোর বিষয়ে সরকারকে ভাবা উচিত।
তিনি বলেন, এই দুইজন হয়তো শহরে বড় হয়েছেন তবে বিদেশে গ্রাম এবং গ্রামীণ মানুষের অবস্থা সম্পর্কে জানেন না এমনটা নয়, তাই তাদের কাজকে গ্রাম স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই তাদের নোবেল পাওয়ার বিষয়টি সার্থকতা লাভ করবে।
স্কুল শিক্ষক সুদীপ দাস এই বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, বাঙালি চিরকালই শ্রেষ্ঠ জাতি এর প্রমাণ আরও একবার দিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কবে সাহিত্যে নোবেল এনেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এছাড়াও ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালির অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বিনয়-বাদল-দীনেশ, মাস্টারদা সূর্যসেন কত শত নাম রয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত করেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের কথা।
তিনি বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জন্য বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের মতো বাংলাভাষী একটি দেশের জন্ম হয়েছে।
সেই সঙ্গে তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, বাঙালিকে দাবিয়ে রাখার জন্য সেই কবে থেকে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই চেষ্টা যে এখন বন্ধ হয়ে গেছে এমনটা নয়। এই অপপ্রয়াস এখনো জারি রয়েছে। তারপরও বাঙালি বারবার নিজেকে প্রমাণ করে আসছে যে আমরা বীরের জাতি এবং সব কাজই অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারি। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগরতলা নন্দননগর উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র বিজয় ঘোষ এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল প্রাপ্তি আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় ভবিষ্যতে আমরাও যেন গোটা বিশ্বের সামনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
অনেকেই নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এই নোবেলপ্রাপ্তির বিষয়টি নিয়ে উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৯
এসসিএন/আরএ