ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

আসছে বাঁশের সাইকেল!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৯
আসছে বাঁশের সাইকেল! বাঁশ ও লোহা দিয়ে তৈরি হয়েছে সাইকেলের মূল কাঠামো। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): বাঁশ দিয়ে বাইসাইকেল বানিয়েছে ‘ত্রিপুরা ব্যাম্বো অ্যান্ড কেইন ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ (ট্রাইবেক)। এনজিওটির জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. সেলিম রেজার তত্ত্বাবধানে ও একাধিক কারিগরের চেষ্টায় প্রায় একমাস ধরে লোহা ও বাঁশ দিয়ে সাইকেলের মূল কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলানিউজ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বাঁশের সাইকেল তৈরিতে যুক্ত রানা দাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাইকেলটির মূল কাঠামোর প্রায় ৮৫ শতাংশ বাঁশের ও বাকি অংশ লোহার তৈরি।

মূলত সংযোগস্থলগুলোই লোহার, বাকি সব বাঁশের। তবে সাইকেলের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এতে ব্রেক, বেলসহ আরও অনেক যন্ত্রাংশ লাগানো বাকি। প্রতিদিন একটু একটু করে আগাচ্ছে বাঁশের সাইকেল তৈরির কাজ।  ছবি: বাংলানিউজ এছাড়া, দুই চাকার ওপর বাঁশের মাডগার্ড লাগানো হয়েছে। সেগুলো এখনো সোজা, আগুনে গরম করে তাদের লোহার মাডগার্ডের মতোই অর্ধ-বৃত্তাকার করা হবে। প্রতিদিনই একটু একটু পরিবর্তন এনে সাইকেলটিকে পরিপূর্ণ করা হচ্ছে।

বাঁশের সাইকেল তৈরির পরিকল্পনা এলো কীভাবে? এর উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সারা বছর বাঁশ দিয়ে কাজ করি। তাই সবসময়ই মাথায় থাকে, এটি দিয়ে নতুন কিছু করা যায় কি-না। এই ভাবনা থেকেই বাঁশের সাইকেল তৈরির চিন্তা আসে। প্রাথমিকভাবে একটি পুরনো সাইকেলের যন্ত্রাংশের সঙ্গে বাঁশ মিলিয়ে এটি তৈরি করা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই নতুন যন্ত্রাংশ দিয়ে এ ধরনের ১০টি সাইকেল বানানো হবে। ইতোমধ্যে যন্ত্রাংশ আনার জন্য পাঞ্জাবের লুধিয়ানার একটি সাইকেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। সেগুলো আসলেই নতুন সাইকেল তৈরির কাজ শুরু হবে।

প্রচলিত লোহার সাইকেলের তুলনায় বাঁশের সাইকেলের স্থায়িত্ব কতদিন হবে? এর জবাবে রানা বলেন, সাধারণ লোহার তৈরি সাইকেলের তুলনায় বাঁশের সাইকেলের স্থায়িত্ব অনেক বেশি হবে। কারণ সাইকেলটি সিজন করা বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়েছে। এই বাঁশে ঘুণ, উই বা অন্য কোনো পোকা সহজে আক্রমণ করতে পারে না। এমনকি বৃষ্টির পানিতেও সমস্যা হবে না। লোহার সাইকেল পানিতে ভিজলে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যায়। বাঁশের সাইকেলে সেই ভয় নেই।

বাঁশের সাইকেলের দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমে একটি তৈরি করা হয়েছে, তাই খরচও কিছুটা বেশি পড়েছে। কিন্তু একসঙ্গে অনেকগুলো তৈরি করা হলে লোহার সাইকেলের তুলনায় দাম অনেক কম পড়বে।

রানা দাশ বলেন, প্রতিদিনই সাইকেলটি চালিয়ে এর মজবুতি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটি উঁচু-নিচু রাস্তায় টানা ১০ কিলোমিটারের বেশি চালিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে।

বাঁশের সাইকেলটি এখনো প্রচারে আনা হয়নি। তারপরও লোকমুখে শুনে সাইকেলটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছে গান্ধীগ্রাম এলাকার ট্রাইবেকের অফিসে। সবাই এর খুব প্রশংসা করছে বলেও জানান রানা।

বাঁশের সাইকেল সম্পর্কে ড. সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, গোটা বিশ্বেই খনিজ সম্পদের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা চলছে। বিজ্ঞানীরা খনিজের ওপর নির্ভশীলতা কমাতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারত সরকারও খনিজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ও বনের গাছে চাপ কমানোয় নন-টিম্বার গাছের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। নন-টিম্বার গাছের মধ্যে অন্যতম হলো বাঁশ। বাঁশকে কীভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা যায়, এবিষয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে। ফলস্বরূপ এসেছে বাঁশের সাইকেল। আমাদের চেষ্টা, খুব দ্রুত যেন সাধারণ মানুষের হাতে এই সাইকেল তুলে দেওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৯
এসসিএন/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।