আগরতলা (ত্রিপুরা): ভারতের প্রথম বাঁশ ভান্ডার (ব্যাম্বো ব্যাংক) গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। ত্রিপুরা ব্যাম্বো মিশনের ফিল্ড অফিসার সমীর জমাতিয়া বাংলানিউজকে একথা জানিয়েছেন।
ত্রিপুরা রাজ্যে ৩০ প্রজাতির বেশি বাঁশ রয়েছে এবং প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে বাস উৎপাদিত হয়। এমন একটি ভান্ডার চালু হলে রাজ্যের বাঁশের যথাযথ ব্যবহার আরো অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
এই বাঁশ ভান্ডারে কি কি সুবিধা থাকবে? বাংলানিউজের করা এই প্রশ্নে সমীর জমাতিয়া বলেন, এখানে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ বিপুল পরিমানে থাকবে। বিক্রেতারা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা প্রজাতির বাঁশ নিয়ে আসবেন। সরকার বাঁশের গুণমান, প্রজাপতি, বাঁশের বয়স, আকার ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গ্রেড ও মূল্য বেধে দেবে। সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে ত্রিপুরা রাজ্যে বাঁশ ভিত্তিক যে সকল শিল্প রয়েছে এই সকল শিল্পের মালিকপক্ষও তাদের চাহিদামতো বাঁশ কিনতে পারবেন সরকার নির্ধারিত মূল্যে। এখন বাঁশ ভিত্তিক শিল্প গুলি কাঁচামালের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ছুটতে হয় তাদেরকে। এটি হয়ে গেলে আর অন্য কোথাও যেতে হবে না।
ফলে একদিকে যেমন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সুবিধা হবে, তেমনি রাজ্যে প্রতিবছর কি পরিমাণ উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে তার সঠিক হিসেব থাকবে। সেই সঙ্গে বাঁশ থেকে সঠিক পরিমাণ কর আদায় করতে পাবে সরকার। এখন বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হওয়া সরকারি খাতে সঠিক ভাবে বাঁশ থেকে কর আসছে না।
সমীর জমাতিয়া আরো বলেন বর্তমানে রাজ্যে কোনো নির্ধারিত বাঁশ ভান্ডার এবং সরকার নির্ধারিত কোনো মূল্য না থাকায় বাঁশ চাষিদের বেশির ভাগ মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে বাঁশ বিক্রি করে থাকেন। এক্ষেত্রে চাষিদের অভিযোগ তারা সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। আবার বাঁশ ভিত্তিক যেসকল শিল্প রয়েছে রাজ্যে এই সকল বেসরকারি শিল্পের মালিকদের মন্তব্য হলো মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের মর্জি মতো দাম নির্ধারণ করেন। অনেক সময় এই দাম নিয়ে সরবরাহকারী এবং কারখানা মালিক পক্ষের মধ্যে সমস্যা হলে বাঁশের অভাবে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়। বাঁশ ভান্ডার গঠন করা হলে এই সমস্যা থাকবে না। কারখানার মালিকরা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বাঁশের যোগান পাবেন বলেও জানান তিনি।
বাঁশ ভান্ডার তৈরি করার জন্য ইতোমধ্যে ত্রিপুরা ব্যাম্বো মিশনের তরফে খোয়াই জেলার চাকমাঘাট এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই এলাকার ৮নম্বর জাতীয় সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খোয়াই নদীর পাশে বর্তমানে সপ্তাহে একদিন বাঁশের হাট বসে, এই জায়গাটিতে বাঁশ ভান্ডার গড়ে তোলা হবে। কারণ এখানে ভান্ডার তৈরি করা হলে গোটা খোয়াই জেলা, ধলাই জেলার এবং গোমতী জেলার একটা বড় অংশের চাষিরা একাধিক নদীর পানি দিয়ে তাদের উৎপাদিত বাঁশ নিয়ে আসতে পারবেন। এতে চাষিদের পরিবহন খরচ খুব সামান্য হবে। জায়গাটি রাজ্যের প্রায় মাঝামাঝি এলাকায় তাই ধলাই, খোয়াই, পশ্চিম এবং সিপাহীজলা জেলায় যে সকল বাঁশ ভিত্তিক শিল্প কারখানা তৈরি হয়েছে তারা খুব সহজে বাঁশ কিনে নিয়ে যেতে পারবেন। এমনকি বর্তমানে বর্হিঃরাজ্যের পেপার মিলসহ অন্যান্য কারখানায় ত্রিপুরা থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে বাঁশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভান্ডার চালু হলে এখান থেকে বাঁশ জাতীয় সড়ক ধরে ভিন রাজ্যের কারখানাগুলোতে সহজে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। ফলে বর্হিঃরাজ্য অনেক বেশি পরিমাণে বাঁশ রফতানি হবে।
পাশাপাশি তিনি আরো জানান রাজ্যের বাঁশ ভিত্তিক শিল্পগুলিতে বাঁশের নির্দিষ্ট অংশ কাজে লাগানো হয় এবং বাকি অংশ ফেলে দেওয়া হয়। শিল্পের ফেলে দেওয়া বাঁশের অবশিষ্ট অংশ দিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বায়োগ্যাস তৈরি করা হচ্ছে। বায়োগ্যাস উৎপাদন করার পর বাঁশে যে অবশিষ্ট বর্জ্য থাকে তা জৈব সার হিসেবে কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায়। ত্রিপুরা রাজ্যে বাঁশের ফেলে দেওয়া অংশ থেকে বায়োগ্যাস ও জৈব সার তৈরির একটি ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘন্টা, জুলাই ২০, ২০২০
এসসিএন/এমএমএস