আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরায় মেশিনে উৎপাদিত গোলাকৃতি আগরতবাতির বাঁশের শলা চীনের পর এবার গেলো যুক্তরাষ্ট্রে।
ভারতের দক্ষিণের কর্ণাটক রাজ্য আগরবাতি শিল্পের জন্য বিখ্যাত।
প্রথমে আগরবাতি তৈরিতে বাঁশের শলা ব্যবহার করা হতো। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত হয়ে রাজ্যের কয়েক হাজার পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু পরবর্তীসময়ে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে মেশিনে তৈরি গোলাকৃতি শলা আমদানি করার অনুমোদন দেয় ভারতের সাবেক সরকার। ফলে ত্রিপুরা রাজ্যে উৎপাদিত হাতে তৈরি বাঁশের শলার চাহিদা শূন্যে এসে পৌঁছে। হাতে তৈরি বাঁশের শলা শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার পরিবার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বাধ্য হয়ে তারা অন্য পেশায় যুক্ত হন বলে বাংলানিউজকে জানান ত্রিপুরা শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান টিংকু রায়।
ভারতের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ত্রিপুরা সরকারের শিল্প উন্নয়ন নিগমের তরফে ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয় যাতে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরবাতি শলার শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়। এই আবেদনের ভিত্তিতে ভারত সরকার বিদেশ থেকে আমদানি করা আগরবাতি শলার উপর আমদানি শুল্ক অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আর ত্রিপুরা রাজ্যে মেশিনে তৈরি আগরবাতি শলার কারখানা স্থাপনের জন্য ঋণ দেওয়ার প্রকল্প চালু করেছে। ত্রিপুরা শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়ন নিগমের মাধ্যমে আগরবাতি শলা তৈরির কারখানা স্থাপনে আগ্রহী মানুষদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান টিংকু রায়।
তিনি আরো জানান, ভারত সরকার আগরবাতির শলা তৈরির কারখানা স্থাপন সংক্রান্ত নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের পর আবার ত্রিপুরা রাজ্যে মানুষের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে আগরতলার পার্শ্ববর্তী বোধজংনগর শিল্প তালুকে বেসরকারি উদ্যোগে শলা তৈরির বিশাল আকারের কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে শলা তৈরীর ছোট ছোট কারখানা স্থাপনের জন্য নতুন করে আবেদন করছেন সাধারণ মানুষ।
ত্রিপুরা রাজ্যে আগের মতো আবার আগরবাতি শলার রমরমা বাণিজ্য শুরু হওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এই বাণিজ্য শুরু হলে প্রতি মাসে নতুন করে কয়েক কোটি রুপির ব্যবসা বাড়বে।
বোজংনগর শিল্প তালুকের মেশিন দিয়ে বাঁশের শলা তৈরি কারখানার সুপারভাইজার ঝর্ণা দেববর্মা বাংলানিউজকে জানান, কারখানায় মোট ২৫ জন শ্রমিক রয়েছেন এবং তারা সবাই মিলে দৈনিক গড়ে প্রায় ৮শ কেজি শলা উৎপাদন করেন। এই পরিমাণ শলা উৎপাদনের জন্য ২শটি মৃত্তিঙ্গা বাঁশের প্রয়োজন হয়। মোট চার ধরনের শলা তৈরি করা হচ্ছে, এগুলির আকার হচ্ছে ৮ ইঞ্চি, ৯ ইঞ্চি, ১১ ইঞ্চি ও ১২ ইঞ্চি।
এই শলাগুলি মূলত বেঙ্গালুরু ও চীনে রপ্তানি করা হয়। এছাড়াও পরীক্ষামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫০ কেজি শলা রপ্তানি করা হয়েছে। তবে তারা আশাবাদী চীনের মতো আমেরিকাও ত্রিপুরায় তৈরি বাঁশের শলা দেখে সন্তুষ্ট হবে এবং নিয়মিত ত্রিপুরা থেকে এই শলা নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০
এসসিএন/এএ