আগরতলা (ত্রিপুরা): আনারসের মতো ত্রিপুরা রাজ্যে উৎপাদিত কাঁঠাল নতুন করে বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলতে পারে এমনটাই অভিমত আগরতলার গান্ধীগ্রাম এলাকার পঞ্চকর্মা রিসার্চ সেন্টারের মেডিক্যাল অফিসার ডা. অচিন্ত্য কুমার দেবের।
অচিন্ত্য কুমার দেব বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং একেবারে দক্ষিণের রাজ্য কেরালায় প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদিত হয়।
‘কাঁঠাল শুধু সুস্বাদু ফল নয়, এটি ঔষধি গুণ সম্পন্ন একটি ফল। এটি মূলত তিন ধরনের রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। প্রথম ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগের ওষুধ হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। মূলত কাঁচা কাঁঠাল যাকে সাধারণত ইচড় বলা হয়ে থাকে। এই কাঁচা কাঁঠালকে মাইনাস ৫০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বরফে রূপান্তরিত করা হয় এবং এরপর এই অবস্থায় এর পাউডার তৈরি করা হয়। এই পাউডারগুলোকে ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধ হিসেবে খাওয়ানো হয়। এছাড়া বাতের রোগ সারাতে এই পাউডার খাওয়ানো হয়। এখন কিডনির সমস্যা বিশ্বজুড়ে। ক্রিয়েটিনিনের স্তর বেড়ে যায় এবং ধীরে ধীরে কিডনি খারাপ হতে থাকে। নিয়মিত কাঁঠাল পাউডার অথবা কাঁচা কাঁঠাল রান্না করে খেলে ক্রিয়েটিনিনের স্তর স্বাভাবিক হয়, ডায়াবেটিস কমে যায়। ’তবে অনেকের ধারণা, মিষ্টি ফলে সুগার (চিনি) রয়েছে তাই এগুলো খেলে ডায়াবেটিস রোগীর শারীরিক ক্ষতি হতে পারে, আসলে এই বিষয়টি কি ঠিক? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। কারণ ফলের মধ্যে যে সুগার রয়েছে এগুলো ফ্রুটস ফর্মে থাকে। তাই এ ধরনের সুগার শরীরে ক্ষতি করে না। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের পাকা কাঁঠালের চেয়ে কাঁচা কাঁঠাল খাওয়া অনেক ভালো। এতে শরীরের উপকার হয়।
‘শুধু কাঁঠাল নয় অনেকের ধারণা আম খেলেও ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু তিনি আম বা কাঁঠাল খাওয়ার পর শরীরে যে পরিমাণ সুগার বৃদ্ধি পায় এর চেয়ে অনেক বেশী পরিমাণ সুগার বৃদ্ধি পায় ভাত খেলে। ’
কাঁঠালের এই ঔষধিগুণের কারণে বিশ্বজুড়ে এখন এর ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন। এমনকি অনেকেই এখন মাংসের বিকল্প হিসেবে কাঁঠালকে খাদ্য তালিকায় যুক্ত করেছেন। এমনকি পিজ্জার মতো খাবারেও কাঁঠাল ব্যবহার করা হচ্ছে। কেরালা রাজ্য থেকে এখন বিদেশে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল রপ্তানি হয়। তাই ত্রিপুরা রাজ্যের উৎপাদিত কাঁঠাল প্রক্রিয়া করে রপ্তানির সম্ভাবনা খুব উজ্জ্বল। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ত্রিপুরা রাজ্যের কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির উদ্যোগ নিচ্ছে। রাজ্যের কাঁঠালের বৈশিষ্ঠ্য হলো এগুলো সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত।
‘ত্রিপুরা রাজ্যে প্রতি বছর কি পরিমাণ কাঁঠাল ধরে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। প্রতি বছর রাজ্যে উৎপাদিত কাঁঠালের বড় অংশ ব্যবহারের পর উদ্বৃত্ত থাকে। আর তা নষ্ট হয়। কাঁঠাল প্রক্রিয়জাতকরণ কেন্দ্র স্থাপিত হলে এটি রাজ্যের অন্যতম অর্থকরী ফল হয়ে ওঠবে’ যোগ করেন ডা. অচিন্ত্য কুমার দেব।
ইতোমধ্যে অন্যরাজ্যের বেশ কজন ব্যবসায়ী ত্রিপুরা থেকে কাঁঠাল রপ্তানির পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।
দীগন্ত বর্মণ নামে আসাম রাজ্যের এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, ত্রিপুরায় কাঁচা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে অন্য রাজ্যে রপ্তানির বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বর্তমানে ত্রিপুরার উত্তর জেলার রাগনা সীমান্ত দিয়ে কিছু পরিমাণ কাঁঠাল বাংলাদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
ত্রিপুরা সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী প্রণজীৎ সিংহ রায় আগেই জানিয়েছেন আনারস, কাঁঠালসহ যেসব ফল রাজ্যে উদ্বৃত্ত হয় তা অন্য রাজ্যে রপ্তানি করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২১
এসসিএন/এইচএডি/