ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দুই বছরেও হয়নি রেলের ক্যাটারিং সার্ভিসের নতুন টেন্ডার

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
দুই বছরেও হয়নি রেলের ক্যাটারিং সার্ভিসের নতুন টেন্ডার

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্যাটারিং সার্ভিস দেওয়া ঠিকাদারদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালেই। সময়সীমার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও আহ্বান করা হয়নি নতুন টেন্ডার।

এদিকে আগের ঠিকাদারি সিন্ডিকেটকে পুনরায় বহাল রাখতেই এ কৌশল নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং রেলওয়ের আসাধু কমকর্তাদের মাধ্যম হয়ে কাজ করছে ওয়ালিউর রহমান  নামের এক ঠিকাদার।

এই সিন্ডিকেটের দেওয়া খাবারের মান যেমন নিম্নমানের, দামও বেশ চড়া। অধিকাংশ খাবারই থাকে বাসি, অনেক সময় দেখা গেছে অনেক যাত্রী এই বাসি খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু এ নিয়ে রেলওয়ের পক্ষ থেকে নেই কোনও তদারকি। যার কারণে যেমন ইচ্ছে তেমন খাবার বিক্রি হয় এসব ট্রেনে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাটারিং সার্ভিসের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালে। রেল মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের কারণে আমরা নতুন টেন্ডার আহ্বান করতে পারছি না। এদিকে ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিসের কাজও বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। তাই আমাদের ক্যাটারিং সার্ভিসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে।  

যারা নবায়ন করেছে তারা সবাই বছরের শুরুতেই অগ্রিম ভাড়া ও ভ্যাট দিয়ে নবায়ন করেছে। রেল ভবন থেকে কোনও সিদ্ধান্ত না আসায় সামনে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। নানামুখী ঝামেলায়ও পড়তে হবে।  

এ সমস্যা সমাধানে রেল ভবনে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। কয়েকটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন সচিব চলে গেছেন। নতুন সচিব অন্য কাজ গুছাতেই সময় চলে যায়। এর পরেও এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগিরই একটা সিদ্ধান্ত আসবে।

আব্দুর রহিম নামের এক ক্যাটারার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবার রেলওয়ের ক্যাটারার নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরখাস্ত আহ্বান করা হতো। এরপর সংশ্লিষ্ট কমিটি যাচাই–বাছাই করে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে। কিন্তু গত ২ বছর ধরে পূর্বাঞ্চলের রেলে টেন্ডারবিহীন ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা করছেন আগের ১৭টি প্রতিষ্ঠান, যাদের লাইসেন্স এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের বিভিন্ন মাসে।

যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, রেল যাত্রায় দীর্ঘ পথে স্বাভাবিকভাবেই কিছু খাবার কিনে খেতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী রেলে মানসম্মত খাবার দেওয়া হয় না। টাকা দিয়েও পঁচা বাসি খাবার খেতে হয়। এগুলো পরিবর্তন হওয়া দরকার। যাত্রীসেবার মানও খুব খারাপ। অথচ সরকার রেলের সেবা বাড়াতে অনেক বেশি জোর দিলেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চলাচলকারী ক্যাটারিং সার্ভিসের (খাবার সরবরাহ) দায়িত্বে আছে ১৭টি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও রেলভবনের ক্যান্টিনে মেসার্স হাবিব বাণিজ্য বিতান, মহানগর এক্সপ্রেস ও মেঘনা এক্সপ্রেস বিল্লাল ব্রাদার্স এন্ড কোং, মহানগর গোধূলী/তূর্ণায় মেসার্স প্রগতি ক্যাটারার্স, মহানগর প্রভাতী/তূর্ণা এক্সপ্রেস মেসার্স সিরাজ মিয়া রেলওয়ে ক্যাটারার্স, পাহাড়িকা/উদয়ন এক্সপ্রেসে এস এ করপোরেশন।

যমুনা এক্সপ্রেস/অগ্নিবীণা/এগারসিন্ধুর প্রভাতী/ এগারসিন্ধুর গোধূলী ট্রেনে মেসার্স নিউ টিপটপ ক্যাটারার্স, পারাবত এক্সপ্রেসে মেসার্স ওবায়দুল হক এন্ড সন্স, জয়ন্তীকা/উপবন এক্সপ্রেস মেসার্স আবদুল্লাহ এন্ড কোং, জয়ন্তীকা/উপবন এক্সপ্রেসে মেসার্স আমজাদ এন্ড সন্স, বিজয় এক্সপ্রেসে শরীফ হোটেল রেস্টুরেন্ট এন্ড ক্যাটারার্স।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেইল/চট্টলা এক্সপ্রেসে মেসার্স ওয়াহদিকা সার্ভিসেস, হাওর এক্সপ্রেস ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসে মেসার্স শাহান-শাহ ক্যাটারার্স, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে মেসার্স কে আর ক্যাটারার্স, তিস্তা এক্সপ্রেসে শাহ আমানত এন্টারপ্রাইজ, উপকূল এক্সপ্রেসে মেসার্স সুরুচি ফাস্টফুড, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে নূর ট্রেডার্স, জামালপুর এক্সপ্রেস মেসার্স ওয়াহদিকা সার্ভিসেস খাবার সরবরাহ করে আসলেও তারা মানসম্মত খাবার পরিবেশনে ব্যর্থ।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাটারিং সার্ভিসের ওপর রেলওয়ের সুনাম নির্ভর করে। তাই যাত্রী সেবায় যাতে কোনো ধরনের গাফেলতি না হয়, সেজন্য ইতিমধ্যে সমস্ত ঠিকাদারদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদেরকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি যাতে তারা খাবারের মানোন্নয়ন, রেলওয়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।  

গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সিরাজ মিয়া রেলওয়ে ক্যাটারার্স’র বিরুদ্ধে ফ্রাইড চিকেনের নামে কাঁচা মাংস দেওয়ার অভিযোগ উঠে।  

অভিযোগ করেন সুজন মাঝি নামের এক যাত্রী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠি। যাত্রা পথে ওই ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে ৩০০ টাকায় ৩টি ফ্রাইড চিকেন কিনেছি। কিন্তু ৩টি ফ্রাইড চিকেনই ভেতরে পুরোটাই কাঁচা ছিল। এরপর রেলওয়ের ই-মেইলে আমি ছবিসহ অভিযোগ দিয়েছি। কোনও প্রতিকার পায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩ 
বিই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।