চট্টগ্রাম: বাঙালির মুখরোচক খাবার হাতে ভাজা গিগজ মুড়ির একটি চালান যাচ্ছে ফ্রান্সে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেড় হাজার কেজি মুড়িসহ শুকনো খাবার ভর্তি ৪০ ফুট লম্বা কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয়েছে গত ১৯ সেপ্টেম্বর।
এ চালানে আরও আছে চিনিগুঁড়া বা সুগন্ধি চাল ১৩ হাজার ৫০০ কেজি, শুকনো শিমের বীজ প্রায় ১ হাজার কেজি, শুকনা মরিচ প্রায় ১ হাজার কেজি। রয়েছে গোটা ধনিয়া আর তেজপাতাও।
শুকনো খাবারের চালানটি রপ্তানি করেছে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াক অ্যান্ড এসএ লিমিটেড’। পতেঙ্গার বেসরকারি ইনকনট্রেড কনটেইনার ডিপো থেকে খাদ্যপণ্যের চালানটি কনটেইনারে লোড করা হয়েছে। এরপর কাস্টম হাউস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষে কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয়েছে।
সরেজমিন রপ্তানিকারকের প্যাকেজিং ইউনিটে দেখা গেছে, অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তিতে নিজস্ব লেবেলসহ মোড়ক ও কার্টনে ভরা হয়েছে মুড়ি, চাল, মরিচ, সাদা শিমের বিচি, ধনিয়া ইত্যাদি। নির্ধারিত সময়ে শিপমেন্টের জন্য দিন-রাত কাজ করেছেন কর্মীরা।
সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান স্পিড লিংক লিমিটেড শুকনো খাবার রপ্তানি কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান মিন্টু বলেন, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি খাদ্যপণ্য, পোড়ামাটি ও কুটির শিল্পসামগ্রীর চাহিদা রয়েছে। এর আগে আমরা পোড়ামাটির পণ্য ও সবজির চালান পাঠিয়েছিলাম। এবার যাচ্ছে চিনিগুঁড়া চাল, মুড়ি ইত্যাদি ড্রাই ফুড। মূলত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথা মাথায় রেখে এসব পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে।
ওয়াক অ্যান্ড এসএ লিমিটেডের অপারেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ হাসান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ফ্রান্সে ড্রাই ফুডের চালান পাঠানো চ্যালেঞ্জের ছিল। বিশেষত পণ্যের গুণগতমান, প্যাকেজিং কোয়ালিটি ইত্যাদিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়েছে। পণ্যের মোড়কে যেন বাতাস না থাকে সেভাবে প্যাকেজিং করা হয়েছে। আশাকরি, প্রবাসীদের সাড়া মিলবে। সবকিছু ঠিক থাকলে নিয়মিত শুকনো খাবার, অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি করতে চাই আমরা।
তিনি বলেন, উন্নত দেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে। আমরা বায়ারের চাহিদা, নির্দেশনা ও আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে পণ্য সংগ্রহ, বাছাই, মোড়কজাতকরণ, কার্টন সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। বড় বড় অনেক শিল্পগ্রুপ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছে। এতে নতুন নতুন রপ্তানি বাজার তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে। ইউরোপে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় অথেনটিক, অর্গানিক পদ্ধতির দেশি মুখরোচক খাবার, পোড়ামাটি ও কুটির শিল্পসামগ্রীর চাহিদা মেটাতে নিয়মিত রপ্তানি করতে চাই আমরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আমাদের দেশ থেকে বিভিন্ন শুকনো খাবার যেমন চাল, মুড়ি, চানাচুর, চিড়া ইত্যাদি রপ্তানি হয়ে থাকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে। কিছু ফ্রোজেন পণ্য কানাডা, ইউএসএ, ইউকের দেশে যাচ্ছে। এ রপ্তানি আশাব্যঞ্জক। স্থানীয় উদ্যোক্তারা আশা নিয়ে, আগ্রহের সঙ্গে এসব কাজে বিনিয়োগ করছেন। এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য ফলপ্রসূ হবে। বিদেশে যারা প্রবাসী আছেন তারা এসব পণ্য কিনছেন। আশাকরি, ভবিষ্যতে এ ধরনের পণ্য রপ্তানি দিন দিন বাড়বে। আমরা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে কোয়ালিটি পণ্য রপ্তানিতে বদ্ধপরিকর।
এআর/টিসি