ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ আশ্বিন ১৪৩২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাতের চট্টগ্রাম

সংসার চালাতে কুলিগিরি

মো. মহিউদ্দিন, ইফতেখার ফয়সাল, এসবি টুপসি, বিপ্লব পার্থ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫:০৫, জানুয়ারি ৬, ২০১৫
সংসার চালাতে কুলিগিরি ছবি : এসবি টুপসি/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: পড়ালেখা করে ভাল চাকরি করার স্বপ্ন সবার থাকে। কিন্তু সে স্বপ্নতো সবার পূরণ হয় না।

ইচ্ছে করে কেউ তো পড়ালেখা বাদ দিয়ে কাজে আসে না। সংসার চালাতে কাজে এসেছি।
এভাবে বর্ণনা করে  নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে সবজি আড়তে কুলির কাজ করা ১৩ বছরের শিশু ফয়সাল ।

ঘড়িতে রাত সাড়ে ১২টা। কাজ করার আশায় রিয়াজউদ্দিন বাজারের তিন পুলের মাথায় অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলো ফয়সাল। নোয়াখালীর মাইজদী থেকে আসা ফয়সালের সঙ্গে কথা  হয় বাংলানিউজের।

পাঁচ ভাই বোনের সংসারে ফয়সাল চতুর্থ। তিন বছর পূর্বে তার বাবা আরেকটি বিয়ে করে চলে যায়। সংসারের দায়িত্ব পড়ে বড় ভাই এর ওপর। কিন্তু বড়ভাইও বিয়ে করে দু’বছর আগে থেকে আলাদাভাবে বসবাস করছে। সংসারের অবস্থা যখন এমন ঠিক সেই সময় মামার হাত ধরে দু’বছর আগে রিয়াজউদ্দিন বাজারে কুলির কাজ করতে আসে ফয়সাল। দায়িত্ব নেয় সংসার চালানোর। তার সঙ্গে এক বছরের বড় ভাই রাসেলও যোগ দেয় এ কাজে।

ফয়সাল জানায়, রাতে কাজ করি আর দিনে ঘুমাই। প্রতি গাড়ি ঠেলা বা ভ্যানগাড়ি আড়তে পৌঁছাতে সাহায্য করলে বিশ টাকা করে দেয় ব্যবসায়ীরা। সারা রাত মোট ১২/১৫টি গাড়িতে কাজ  করে আয় হয় তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা।

ফয়সালের বড় ভাই রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, ছোট ভাই ফয়সাল রিয়াজউদ্দিন বাজারে কাজ করছে আর আমি পড়ালেখা করব এমনতো আর হয় না। তাই নিজেও মাদ্রাসা থেকে চলে আসি ছোট ভাইকে সহযোগিতা করার জন্য। মাকেও নিয়ে আসি নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামে। দুই ভাইয়ে যা আয় করি তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলে। আর দুই বোন আছে তাদেরকে বিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টায় আছি।

এখানেই দেখা মিললো ভোলা থেকে আসা নয়নের, যে কিনা নয় বছর বয়সে কুলির কাজ করতে আসে। সখের বশে করা এ কাজ সতের বছর বয়সেও করে যাচ্ছে আগের মতোই।

নয়ন বাংলানিউজকে বলেন, মা বাবা চট্টগ্রামের একটি টেকনিক্যাল বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিল পড়ালেখা করার জন্য। একদিন বন্ধুর সাথে সখের বশে আড়তে কাজ করতে আসি। প্রথমদিন প্রায় দুইশ টাকা আয় করেছিলাম। এ দুইশ টাকার লোভ সামলাতে পারেনি। পড়ালেখা বাদ দিয়ে তখন থেকে নিয়মিত রাতে  কাজ করছি আড়তে। প্রতিদিন চারশ থেকে পাঁচশ টাকা আয় করেন বলে জানান নয়ন।

কিছুদিন পূর্বে বিয়ে করেছেন নয়ন। এত কমবয়সে বিয়ে করলেন কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তিন ভাই বোনের মধ্যে আমি বড়। একা থাকি তাই মা বাবা জোর করে বিয়ে দিয়েছে। বিয়ের পর সংসারের খরচ আরও বেড়ে গেল। এ কারণে রাতের পাশাপাশি দিনেও অন্য কাজ করতে হয়।
 
শুধু ফয়সাল কিংবা রাসেল নয় কমবয়সী এসব শ্রমিকের মধ্যে রয়েছে আরো প্রায় পনের জন। যারা প্রতি রাতে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেদের সংসার চালায়। সংসারের পরবর্তীদিনের খরচ জোগাড় করতে সারা রাত কাটিয়ে দেন রিয়াজউদ্দিন বাজারে।

বাংলাদেশ সময় : ০৪৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬ , ২০১৫।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।