ঢাকা, রবিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর ‘আজ যাবে না’ ওয়াটার বাস!

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর ‘আজ যাবে না’ ওয়াটার বাস! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

একদিনে অন্তত সাতবার যাতায়াত করার কথা, কিন্তু দান উল্টে এখন সাতদিনেও একবার ছেড়ে যায় কি-না তা শক্ত করে বলতে পারছিলেন না ওয়াটার বাস চালক আসাদ...

ঢাকা: একদিনে অন্তত সাতবার যাতায়াত করার কথা, কিন্তু দান উল্টে এখন সাতদিনেও একবার ছেড়ে যায় কি-না তা শক্ত করে বলতে পারছিলেন না ওয়াটার বাস চালক আসাদ!

রাজধানীবাসীর যাতায়াত আরও সহজ করতে ঢাক ঢোল পিটিয়ে ২০১৩ সালের ৪ জুলাই তৃতীয়বারের মতো ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি)। এর আগে ২০০৪ সালে একটি ওয়াটার ট্যাক্সি নামানোর পর ২০১০ সালের ২৮ আগস্ট দুটি নৌযান দিয়ে দ্বিতীয় ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করা হয়।

তবে যাত্রীর অভাব এবং নৌযানে ত্রুটির অজুহাতে সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়।

কেবল যাত্রীরই নয়, চালক আসাদেরও মত ব্যবস্থাপনার ত্রুটিতে নষ্ট হচ্ছে বারে বারে ওয়াটার বাসগুলোও।

পুরান ঢাকার বাদামতলী থেকে নতুন ঢাকার গাবতলী পর্যন্ত সকাল পাঁচটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রতিদিন ওয়াটার বাস চলার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে বন্ধ থাকছে সার্ভিসটি।

যাত্রী কামাল জানালেন, ৭ নভেম্বর (সোমবার) দুপুরের আগে আগে ওয়াটার বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। সকালেই ছাড়ার কথা শোনা গেলেও দুপুর পর্যন্ত কোনো লক্ষণ নেই। দুপুর ১টার দিকে কর্তৃপক্ষ জানায়, আড়াইটায় যাত্রা শুরু হবে। কিছু যাত্রী তখনও অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক পথে গাবতলীতে রওয়ানা হলেও দুই-তিন ঘণ্টা লেগে যাবে। সঙ্গে রয়েছে ভোগান্তি। এখানে ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করে, যেতে পারলেই আরামের জার্নি।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর মহুরী ওয়াটার বাস দিলো ছুট। যেতে যেতে কথা হয় চালক শিশিরের সঙ্গে। তিনি বললেন, তিন দিন আগে সবশেষ একটা বাস ছেড়ে গিয়েছিলো- সেদিন চালিয়েছিলাম।

তিনি আরও জানালেন, ইমরান ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান বাদামতলী ঘাটের ইজারা নিয়েছে। তাদেরই আওতায় ওয়াটার বাসগুলো। মূলত এই প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনাতেই ডুবতে বসেছে এই সার্ভিস, তারাই বাস ছাড়ে না। আমরাও ঘাটে হেলান দিয়ে, শুয়ে-বসে সময় কাটাই। গত ২৪ অক্টোবর মিটিংয়ে বিআইডাব্লিউটিএ ওয়াটার বাস নিয়মিত চালানোর নির্দেশ দেয়। অথচ সরকারের কথা কানে তুলছে না ইজারাদাররা।

তিনি জানান, মোট ১২টি বাসের মধ্যে এখানে ৮টি রয়েছে, ২টি নারায়ণগঞ্জ-টঙ্গী রুটে চলে। আর একটি চট্টগ্রামে। বাকিগুলোর মেরামত কাজ চলছে।

বাসগুলো থেকে আয়-ব্যয়ের প্রাথমিক হিসাব দিতে গিয়ে শিশির বলেন, প্রতিটি বাসের জন্য দৈনিক সরকারকে ৩০০ টাকা জমা দিতে হয়। চললে লাগে ৫০ লিটার ডিজেল, এর দাম আসে প্রায় তিন হাজার টাকা। তারা বাস চালাবে না; বসিয়ে বসিয়ে সরকারকে ৩০০ টাকা দেবে তবুও ডিজেল খরচ করবে না, এই হলো ইমরান ট্রেডার্সের কাণ্ড!
‘ওয়াটার বাসে সিট মোট ৪৬টি, এছাড়া আরও ১২-১৬ জন যাত্রী সহজেই নেওয়া সম্ভব। প্রথম প্রথম যখন চলতো তখন শ’খানেক যাত্রী হতো, এখন যা নামতে নামতে আঙুলের গোনায় গিয়ে পৌঁছেছে। আজ যেমন যাত্রী সংখ্যা ১৩ জন’, জানালেন তিনি।

“ওয়াটার বাস সার্ভিসের উন্নয়ন হলে সড়ক পথে মানুষের ঝোঁক কমবে, কিন্তু একটি অসাধু চক্রের কারণে এটি হচ্ছে না”, মন্তব্য যাত্রীদের।
 
সস্ত্রীক বাসে ওঠা জামান বলেন, পুরান ঢাকা থেকে গাবতলী যাবো। সুবিধাজনক যাত্রী সেবায় এই বাসের বিকল্প নেই অথচ যা আজ ভঙ্গুর দশায়।

এর থেকে উত্তরণে সরাসরি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তমূলক হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

আরেক যাত্রী আবদুর রহীম বলেন, আমার বাসা পুরান ঢাকাতেই। নিয়মতি ওয়াটার বাসে চড়তাম। কিন্তু এখন আর বাসই পাই না। এতো ভালো একটা সেবা ছিলো যা চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে- খুব খারাপ লাগছে। এমন অনেক দিন হয়েছে, দেড়-দুই-আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষার পরে তারা বলেছে যাবে না!

যাত্রী পাওয়া যায় না- ইজারাদারদের এমন অজুহাত শোনা যায়। যা একান্তই বানানো দাবি করেন রহীম। নিয়মিত সার্ভিস চালু থাকলে মানুষের ভিড় আটকানো যাবে না, মত দেন তিনি।

তার কথায় সায় দেন চালক শিশিরও। তিনি বলেন, আগে চলতে দিন, কিছু দিন যাত্রী কম হোক, একদিন- দু’দিন, বড় জোর তিনদিন। এরপর চতুর্থ দিন ঠিকই যাত্রীর ভিড় হবে।

এরই মধ্যে হেমন্তের শীত শীত বিকেলের সূর্যটা পশ্চিমে কাত হয়ে গেছে। নদীতে তেমন স্রোত নেই, বাদামতলী পার হয়ে সোয়ারিঘাট পরে খোলামুড়া। এগিয়ে যেতেই বিস্তৃত নদী দৃষ্টিকে প্রশস্ত করে। কমতে থাকে নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, ট্রলার কিংবা বালুবাহী ট্রলার। বাঁয়ে কেরানীগঞ্জ। ডান পাশে ঢাকা।

এখানেই শোনা যায় পাখিদের কলতান- কূলে কূলে গাছপালার সবুজ সমারহ মুগ্ধতা ছড়াতে থাকে পদে পদে। এর সঙ্গে মিষ্টি হাওয়া বাড়তি পাওনা। ভ্রমণের এক দারুণ উপকরণ এই ওয়াটার বাস। এক ঘণ্টায় বছিলা ব্রিজ, কিছু দূর এগিয়ে বাঁয়ে ওয়াশপুর, কেরানীগঞ্জ। আরেকটু গেলেই ডানে ঢাকা উদ্যান, বাঁয়ে মিলবে আমিন বাজারের পথ। ডানেই পাথর কারখানা পার হলে গাবতলী। ঘাটে নামলেই পর্বত সিনেমা হল।

স্মরণ এলো; সিনেমার কাহিনীর মতোই যেনো আটকে গেছে ওয়াটার বাস সার্ভিস। বাস্তবে কিছুতেই মাথা তুলে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না! 

অারও পড়ুন
*যতই দূষিত হোক বুড়িগঙ্গাতেই গোসল (ভিডিও)
*নৌবিহারে বুড়িগঙ্গা হবে বিনোদনের প্রাণ

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
আইএ/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।