ঢাকা, রবিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নাটোরে আমন ধান ঘরে তোলার ধুম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
নাটোরে আমন ধান ঘরে তোলার ধুম ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডারখ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের গ্রামীণ জনপদে এখন চলছে আমন ধান কাটা-মাড়াই ও ঘরে তোলার ধুম।

নাটোর: উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডারখ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের গ্রামীণ জনপদে এখন চলছে আমন ধান কাটা-মাড়াই ও ঘরে তোলার ধুম।

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলানো সোনারাঙা ধান ঘরে তুলতে উদয়াস্ত ব্যবস্থা এখন এ জনপদের প্রতিটি কৃষক পরিবারে।

সকাল-থেকে সন্ধ্যা হাড়ভাঙা খাঁটুনি গেলেও তাতে ক্লান্তি নেই কৃষাণ-কৃষাণীর। সেচ খরচ ছাড়াই এবার আশাতীত ফলনে তাদের চোখে-মুখে প্রশান্তির চিহ্ন।

চলতি মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত ৯ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষাবাদ হয়েছে। পাশাপাশি বিঘাপ্রতি গড়ে আড়াই মণ ধান বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। এবার অতিরিক্ত ৯ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সিংড়া উপজেলায় ২১ হাজার ৮৫০ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ১৪ হাজার ১০০ হেক্টর, নাটোর সদরে ৯ হাজার ৯৩৫ হেক্টর, লালপুরে ৬ হাজার ৮০৫ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর, বাগাতিপাড়ায় ৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর এবং নলডাঙ্গা উপজেলায় ৩ হাজার ৫১০ হেক্টর জমি রয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, এসব আবাদি জমির মধ্যে ৬৪ হাজার ৭৫ হেক্টরে উচ্চফলনশীল বিনা-৭, ব্রি-৩৯, ব্রি-৪৯, স্বর্ণা জাত, ৩৭৫ হেক্টরে ধানী গোল্ড, টিয়া, তেজ হাইব্রিড এবং ১ হাজার ৪০ হেক্টরে কালোজিরা, চিনি আতপ, দুধসর জাতের সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়েছে।

চলতি বছর প্রতি হেক্টর জমিতে ৪ দশমিক ০৫ টন এবং বিঘাপ্রতি ১৩ দশমিক ৫ মণ ধান হিসেবে মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ১৪২ টন ধান। ইতোমধ্যে আবাদি জমির  প্রায় ৩০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলার মহিষভাঙ্গা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বিনা-৭ ধান আবাদ করে ফলন পেয়েছেন বিঘায় ১৬ মণ। চর নটাবাড়িয়া গ্রামের জাকির হোসেন ব্রি-৬২ ধানে ফলন পেয়েছেন বিঘায় ১৪ মণ করে।

সিংড়া, লালপুর ও গুরুদাসপুর এলাকার কৃষকরা জানান, বিঘাপ্রতি ১৬-১৮ মণ ধান পেয়েছেন। এতে প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ হয়েছে ৬-৭ হাজার টাকা।

নলডাঙ্গার বুড়িরভাগ গ্রামের কৃষক ফজলার রহমান ও হলুদঘর গ্রামের কৃষক আজাহার আলী জানান, এবার বৃষ্টিপাত বেশি এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় সেচ খরচ ও কীটনাশক খরচ কম হয়েছে। এদিকে, কৃষি বিভাগের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার আমনের আবাদ ও ফলন দুই-ই ক্রমশ বাড়ছে।

২০১৩ সালে ৪৯ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৯ হাজার ৭২১ টন ধান উৎপাদন হয়। পরের বছর ৬০ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮৬ টন এবং ২০১৫ সালে ৬০ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৪৮ টন ফলন পাওয়া যায়।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হুদা বাংলানিউজকে জানান, কৃষকদের প্রচেষ্টা এবং কৃষি বিভাগের প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তার সমন্বিত ফলাফলে রোপা আমনের উন্নত ফলন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।

তিনি বলেন, জেলায় উন্নত ধানের বীজ তৈরিতে কৃষকদের সার ও বীজ সুবিধা দিয়ে ১ একরের ২৪০টি এবং ১ বিঘার ৮৬৪টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। নতুন প্রযুক্তিতে কৃষকদের পরিচিত করে তুলতে রিপার মেশিনে ধান কাটার মাঠ দিবস করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।