ঢাকা, রবিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ময়লা, তেল চিটচিটে প্লেটে ফুসকা-চটপটি খাচ্ছেন?

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
ময়লা, তেল চিটচিটে প্লেটে ফুসকা-চটপটি খাচ্ছেন? ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পথে-ঘাটে ফুসকা-চটপটি দেখলে অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ময়লা পানি দিয়ে ধোয়া তেল চিটচিটে নোংরা প্লেটের কথা বেমালুম ভুলে যান।

ঢাকা: পথে-ঘাটে ফুসকা-চটপটি দেখলে অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

কিন্তু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ময়লা পানি দিয়ে ধোয়া তেল চিটচিটে নোংরা প্লেটের কথা বেমালুম ভুলে যান।

মিরপুর-১০ নম্বর গার্লস আইডিয়া ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে সারি সারি ফুসকা, চটপটির দোকান নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। শুধু সামনে নয় আশপাশের রাস্তাগুলোতে ভ্যান, টিন, পলিথিন ঘরেও হচ্ছে ফুসকা-চটপটির বেচাকেনা।

রোববার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অত্যন্ত নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ময়লা প্লেটে পরিবেশন করা হচ্ছে এসব ফুসকা-চটপটি।

সবচেয়ে ঝুঁকির দিক একই পানিতে বার বার প্লেট-বাটি ধুয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে। বালতির পানি ময়লা হতে হতে রং পরিবর্তন হয়ে গেলেও সেই পানিতেই চলে ধোয়া-মোছা। ময়লা পানিতে প্লেটগুলো পরিষ্কার হয় না। সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে না ধোয়ায় প্লেটগুলোতে তেল চিটচিটে ময়লার আস্তরণ জমে যাচ্ছে। এ থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পেটে গিয়ে মারাত্মক রোগেরর সৃষ্টি হতে পারে।
ফুসকা বিক্রেতা আবদুস সোবহান বাংলানিউজকে জানান, তার দোকানে ২০টির মতো প্লেট-বাটি রয়েছে। সারাদিনে তিনি দেড়’শ থেকে দুই’শ কখনো কখনো আড়াই’শ থেকে তিন’শ প্লেট ফুসকা বিক্রি করেন। এতো সংখ্যক প্লেট পরিষ্কার করতে দিনে তিনি মাত্র ৩/৪ বালতি পানি ব্যবহার করেন।

নোংরা প্লেট ব্যবহার বিষয়ে মোহাম্মদ সেলিম নামের আরেক বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে বলেন, পরিষ্কার করি। বালতিতে থাকা ময়লা প্লেটগুলো দেখিয়ে বলেন এগুলোতো পরিষ্কারই। আপনি ময়লা দেখছেন কোথায়? সবাইতো এ রকম প্লেটেই খাচ্ছে!

এখানেই শেষ নয় বিক্রেতারা খালি হাতে কখনো ময়লা পানিতে প্লেট পরিষ্কার, গা চুলকাচ্ছেন, নাকের সর্দি পরিষ্কার করছেন, ঘাম মুছছেন আবার সেই হাতেই ফুসকা পরিবেশন করছেন।

এসব বিষয়ের দিকে লক্ষ্য না করে ফুসকা-চটপটি খাওয়ায় মজেন এক শ্রেণির অসচেতন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

গার্লস আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তাসফিয়া জাহান বাংলানিউজকে বলেন, আসলে আমরা কখনোই খেয়াল করিনি ধোয়ার পানি এবং প্লেটগুলো এতো ময়লা।
তিনি বলেন, কানে ধরেছি এ রকম পরিবেশনের ফুসকা-চটপটি আর কখনো খাবো না। বন্ধুরাও যেন না খায় তাদের বলবো।

অভিভাবক রাবেয়া আক্তার বলেন, স্কুলে এসে এ ময়লা-নোংরা পরিবেশে ফুসকা-চটপটি খায় বাচ্চারা। এজন্য পেট ব্যাথা, পেটের অসুখ লেগেই থাকে।

হাজারিবাগসহ রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ফুসকার প্রধান উপকরণ আসে। মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এসব ফুসকা হকারদের হাত ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। ফুসকাতে দেওয়া আলু সিদ্ধ, তেঁতুলের টক সবই তৈরি ও পরিবেশন হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।

এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ স্কয়ার হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক ডা. সোহরাব হোসেন বাদল বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, ফুড পয়জনিং ছাড়াও হেপাটাইটিস বি, সি, টাইপয়েডসহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধি হতে পারে।

বাইরে খাবার খাওয়ার আগে পরিবেশ ও পরিবেশন স্বাস্থ্যকর কিনা তা নিশ্চিত হয়ে খাবার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
এমইউএম/ওএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।