ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শেষ সম্বল ‘কালুকে’ নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান কসিম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৬
শেষ সম্বল ‘কালুকে’ নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান কসিম ছবি- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

কি দেখবার আইছেন? আছে শুধু ছাই, এছাড়া কিছু নাই, আগুনে সব কাইড়া নিছে। পথের ফকির বানাইয়া দিছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুনও নাই। পোলাপাইন নিয়া কই যামু, কি করমু, কিছুই বুঝবার পারতাছিনা। সব শেষ হইয়া গেলো, আল্লাহ.. গরিবের ওপর তোমার কোনো দয়া মায়া নাই!

ঢাকা: কি দেখবার আইছেন? আছে শুধু ছাই, এছাড়া কিছু নাই, আগুনে সব কাইড়া নিছে। পথের ফকির বানাইয়া দিছে।

মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুনও নাই। পোলাপাইন নিয়া কই যামু, কি করমু, কিছুই বুঝবার পারতাছিনা। সব শেষ হইয়া গেলো, আল্লাহ.. গরিবের ওপর তোমার কোনো দয়া মায়া নাই!

গত রোববার (০৪ নভেম্বর) রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুনের লেলিহান শিখায় নিজের পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে বুধবার (০৭ নভেম্বর) দুপুরে এভাবেই বিলাপ করছিলেন কসিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, বাড়িতে হালের জমি নাই। পরিবারের ১০ সদস্যের তিন বেলার খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। ৩০ বছর আগে কাজের সন্ধানে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে ইট টানার কাজ করেন। পরে টাকা জমিয়ে মুদি দোকান দেন। এখন কাঁচামালের ব্যবসা করেন। অনেক কষ্টে এই জায়গায় কয়েকটা ঘর কিনে ভালোই চলছিলো।

তবে সেদিনের আগুনে পুড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। সম্বল হিসেবে আছে একটি মাত্র গরু। এই গরু দিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে চান কসিম উদ্দিন।  

তিনি বলেন, ঘটনার দিন আগুন আগুন চিৎকার শুনে বস্তির মূল সড়ক থেকে দৌড়ে নিজ বাড়িতে চলে আসি। এ সময় আগুনের লেলিহান শিখা দেখে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। কোনো কিছুই সরাতে পারিনি। শুধু আদরের গরু ‘কালুকে’ নিয়ে নিরাপদে সরে যেতে পারি। আগেই পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপদে বেরিয়ে যায়।  

‘গরুটা কয়েকদিনের মধ্যেই বাচ্চা দিবো, এইডাই এহন শেষ সম্বল’।  

আগুনের বিষয়টি উল্লেখ করে কসিম বলেন, চুরি-ডাকাতি হইলে মানুষের অনেক কিছুই থাকে। তবে আগুনে পুড়লে কিছুই থাকে না।  

কসিম বলেন, কড়াইল বস্তিতে তার ১১টি ঘর ছিল। প্রতিটি ঘর থেকে মাসে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা ভাড়া পেতেন। আগুনে নিজের ঘরসহ সব ঘর পুড়ে যাওয়ায় এখন পরিবার নিয়ে রাস্তায় ঘুমাতে হচ্ছে। মাথার উপরে খোলা আকাশ।
  
সরেজমিনে কড়াইল বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, রোববারের আগুনে বস্তির মানুষগুলো সর্বশান্ত হয়ে গেছেন। কয়েকদিন আগেও মাথার ওপর ছাদ থাকলেও এখন তারা উন্মুক্ত আকাশের বাসিন্দা। অনেকেই বিলাপ করছেন আর পুড়ে যাওয়া টিন ও আসবাবপত্র সরানোর কাজ করছেন।
 
বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা খাবার ও পুরনো কাপড়ের আশায় বসে আছেন সর্বশান্ত হওয়া মানুষগুলো। খোলা আকাশে তাবু টানিয়ে রাত্রিযাপন করছেন।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বস্তির ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট পুড়ে যায়। এতে প্রায় হাজার দুয়েক মানুষ নিজেদের শেষ সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন।  


বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৬
আরএটি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।