ঢাকা, বুধবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ক্রসিংয়ে বাইক চালকদের উৎপাতটাই বেশি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৬
ক্রসিংয়ে বাইক চালকদের উৎপাতটাই বেশি রাতে কারওয়ানবাজার রেল ক্রসিং। ছবি: সুমন শেখ

যাদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত জেগে এই দায়িত্ব পালন তারাই গালি-গালাজ করেন। বিশেষ করে বাইক চালকদের উৎপাতটা অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই।

ঢাকা: যাদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত জেগে এই দায়িত্ব পালন তারাই গালি-গালাজ করেন। বিশেষ করে বাইক চালকদের উৎপাতটা অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই।



 কারওয়ান বাজার রেল গেটের লাইনম্যান  আবু তাহের মিয়া তার যন্ত্রণার কথা এভাবেই তুলে ধরলেন।

তিনি বললেন, মোটরবাইক চালকরা কোনও নিয়ম মানতে চায় না। গেট ফেলা থাকলেও এসে হাত দিয়ে উচু করে নিচ দিয়ে পার হয়ে যেতে হয় তদের। কিছু বলতে গেলে উল্টো তেড়ে আসেন। কেউ কেউ গালিগালাজও করে।

এসময় মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়। কখনও মনে হয় চাকরি ছেড়ে দেই। কিন্তু কি করব পেটের দায়ে চাকরি করতে হয়। না হলে গালি শুনে চাকরি করার কোন ইচ্ছা ছিল না, বলেন তাহের।

অথচ তাহের মিয়ারা চব্বিশ ঘণ্টাই জেগে থাকেন শুধু পথচারিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।   কখনও কখনও নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দিয়ে লাল ফ্লাগ  হাতে দাঁড়িয়ে পড়েন রেল লাইনের উপরে।

তাহের মিয়া বলেন, কখনও কখনও কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্যাম হঠাৎ করে রেল লাইনের উপর এসে পড়ে। আর তখন খুব একটা কিছু করার থাকে না। লাল পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে যাই রেল লাইনের উপর। আপের (ঢাকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার) সময় খুব একটা জটিলতা হয় না। কারণ এখানে লাইনটি সোজা। অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যায়।

কিন্তু ডাউনের সময় (ঢাকা অভিমূখে) খুবই জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। কারন এখানে লাইনটি পুরোপুরি ধনুকের মতো বাঁকা। একটু দূরেই আর কিছু দেখা যায় না। তখন লাল পতাকা দেখিয়ে ট্রেন থামানো কঠিন হয়ে পড়ে। তবু অনেক সময়ে জীবনের ঝুকি নিয়েই পথচারিদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন আবু তাহের।

নিয়ম অমান্য করার প্রবণতা মোটর বাইক চালকদের মধ্যে বেশি। তারা কোনভাবেই একটু সময় অপেক্ষা করে রাজি নন। ট্রেনের মাথা দেখা যাচ্ছে। তবুও তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হন।
 
এই গেটে মোট ১৫ জন তিন শিফটে ভাগ হয়ে ডিউটি পালন করেন। প্রত্যেক শিফটে আট ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন করতে হয়। রাত দশটায় শুরু করে ভোর ছয়টায় শেষ হয়। নাইট ডিউটির পর ওই দিন আর ডিউটি থাকে না। এটাই তাদের ডে অফ।

প্রত্যেক শিফটে চারজন থাকেন চারটি পয়েন্টে গেট উঠা-নামা করার জন্য। দু’জন রয়েছে পতাকা দেখানোর জন্য। যারা পতাকা দেখিয়ে ট্রেনকে এগিয়ে যাওয়ার সংকেত দেন। লেভেল ক্রসিংয়ে ময়লা পড়ে জ্যাম লেগে গেলে সেটিও দেখভাল করার দায়িত্ব ফ্লাগম্যানের।
বৃহস্পতিবার দিনগত রাত তিনটায় গিয়ে পাওয়া গেলো আবু তাহেরকে। গেটের পাশেই বসে রয়েছেন সিগন্যালের অপেক্ষায়। সিগন্যাল পেলেই গেট নামিয়ে দিয়ে ট্রেনের চলার পথ নিস্কন্টক করবেন। তিনি যেখানে বসে আছেন এই পয়েন্ট থেকে মগবাজারের দিকে অনেকদূর পর্যন্ত দেখা গেলেও তেজগাঁও এর দিকে বাঁকের কারণে দৃষ্টি আটকে যাচ্ছে। এমনিতে বাঁক তার উপর ঝুপড়ি ঘর দৃষ্টিসীমাকে সংকুচিত করে ফেলেছে। যে কারণেই নাকি কারওয়ান বাজারের মাঝে মধ্যেই ট্রেনে কাটা পড়ছে লোকজন।

আবু তাহের মিয়া জানালেন, এই পথ দিয়ে দিনে ১১৮ টি ট্রেন যাতায়াত করে। ভোর ৪.১০ টায় প্রথম ঢাকায় প্রবেশ করে ধুমকেতু। আর হাওর এক্সপ্রেস রাত ১২.১০ টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। এইটা সিডিউল অনুযায়ী চলাচল করলে। এরপাশ্বেই রয়েছে ঘন্টি ঘর। সেখানে কয়েকজনকে অঘোর নিদ্রায় দেখা গেলো।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৬
এসআই/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।