ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৬ ডিসেম্বর শক্রমুক্ত হয় মৌলভীবাজারের ৪ উপজেলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
৬ ডিসেম্বর শক্রমুক্ত হয় মৌলভীবাজারের ৪ উপজেলা

মৌলভীবাজার: ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় মৌলভীবাজারের চার উপজেলা শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কুলাউড়া ও বড়লেখা। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে এদিন মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল এই চার উপজেলার মানুষ।

বড়লেখা: মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা বড়লেখা মুক্তিযুদ্ধে ৪ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। সেসময় মিত্রবাহিনীর মেজর সিআর দত্ত সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন।

এ সেক্টরের সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের করিমগঞ্জে প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজীর নেতৃত্বে। বড়লেখা থানার পার্শ্ববর্তী বারপুঞ্জি ও কুকিরতল সাব-সেক্টর স্থাপন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে  প্রায় ৩২৫টি গ্রামের মুক্তিকামী মানুষ হুঙ্কার তুলেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। সাবেক এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজীর নেতৃত্বে হানাদারদের বিরুদ্ধে অসংখ্য ছোট বড় আক্রমণ চালিয়ে যুদ্ধের শুরুতেই বড়লেখার বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এ উপজেলাবাসী।

১৯৭১ সালে এদিনে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নাকাল হানাদাররা বড়লেখা ছাড়তে বাধ্য হয়। ভোরে শত্রুমুক্ত হয় বড়লেখা। পরে বর্তমান উপজেলা পরিষদের সামনে এক বিজয় সমাবেশে বড়লেখাকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

কুলাউড়া: স্বাধীনতা যুদ্ধের এদিনে শত্রুমুক্ত হয় হানাদারদের বড় ঘাটি কুলাউড়া উপজেলা। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গাজীপুর চা-বাগানে শেষ যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে আনে মুক্তিযোদ্ধারা।

সাবেক জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোমিত আসুক ও মিত্রবাহিনীর কর্নেল হর দয়াল সিংহের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী ১ ডিসেম্বর গাজীপুর চা-বাগান এলাকার দিকে অগ্রসর হলে হানাদারদের সঙ্গে পাল্টা গুলিবর্ষণ চলতে থাকে। ২ ডিসেম্বর রাতে যুদ্ধ শুরু হয়। ৩ ডিসেম্বর ৪/৫ গোর্খা রেজিমেন্ট কর্নেল হারকিলের নেতৃত্বে একটি দল যোগ দেন পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করতে। তবুও গাজীপুর চা-বাগান এলাকা দখলমুক্ত করা সম্ভব না হলে শেষ দিকে লস্করপুর গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনী এ যুদ্ধে অংশ নেন। ৪ ডিসেম্বর এমএ মোমিত আসুক ও মোহন লাল সোম রাত ১২টায় পেছন দিক থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৫ ডিসেম্বর গাজীপুর চা-বাগান এলাকা মুক্ত হয়। ওই দিনই সন্ধ্যার দিকে সম্মিলিত বাহিনী কুলাউড়ায় পৌঁছে। এ রাতেই সব পাকিস্তানি সৈন্য ব্রা‏‏হ্মণবাজারের দিকে সড়ক পথে কুলাউড়া ত্যাগ করে। ওই যুদ্ধে প্রায় ২৫০ জন পাকিস্তানি সৈন্য প্রাণ হারান। এভাবেই ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় কুলাউড়া।

রাজনগর: একই দিনে হানাদারমুক্ত হয় রাজনগর উপজেলা। সেদিন পাকিস্তানি বাহিনীকে হটিয়ে উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে প্রথম বিজয় পতাকা উত্তোলন করে আমজনতা। পরবর্তীতে যৌথবাহিনীর কামান্ডার কর্নেল এমএ হামিদ লাল-সবুজের বিজয় পতাকা উড়ান রাজনগরের ক্লাব প্রাঙ্গণে। সেখানেই রাজনগর শত্রুমুক্ত ঘোষণা দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ রাজনগর পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম প্রতিরোধ সমাবেশের মধ্য দিয়ে রাজনগরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে হানাদারদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে থাকে যৌথবাহিনী।

৪ ডিসেম্বর ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল মৌলভীবাজার হয়ে রাজনগর পৌঁছেন। তারা উদনা চা-বাগান অবস্তানরত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেন। ৫ ডিসেম্বর প্রচণ্ড শীতে মুক্তিযোদ্ধারা প্রবেশ করেন উদনা চা-বাগানে এবং আক্রমণ করেন হানাদারদের ওপর। টানা যুদ্ধের পর ৬ ডিসেম্বর ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনারা পালাতে শুরু কর এবং এদিনে শত্রুমুক্ত হয় রাজনগর।  

শ্রীমঙ্গল: ১৯৭১ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য আলতাফুর রহমান, কমান্ডার মানিক ও ফরিদ আহম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গলে গঠিত হয়েছিল মুক্তিবাহিনী। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে সেদিন মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল এ অঞ্চলের চা-শ্রমিকরা।

২৩ মার্চ শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সামনে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমেই শ্রীমঙ্গলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমল লড়াই শুরু করেন তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে এদিনে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে পৌরসভা চত্বরে পুঃনরায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেন মুক্তিযোদ্ধারা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।