ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রেসিডেন্ট পদকপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মার্কিন নাগরিক হত্যা মামলার আসামি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
প্রেসিডেন্ট পদকপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মার্কিন নাগরিক হত্যা মামলার আসামি সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তয়াছের জাহান

ঢাকা: রাজধানীতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক সাফায়েত মাহবুব ফারাইজিকে হত্যার অভিযোগে বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তয়াছের জাহানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযুক্ত এসি তয়াছের জাহান কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রপতির পুলিশ (পিপিএম) পদকে ভূষিত হয়েছেন।

তার বিরুদ্ধে এই মামলায় অবাক হয়েছেন সহকর্মীদের অনেকেই।

সহকর্মীদের ভাষ্য, তার কর্মজীবনের প্রায় ছয় বছরে কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনে বেশ সুনাম রয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, এটি একটি ভুয়া মামলা।

বুধবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রকিবের আদালতে ফারাইজির মা শামিমুন নাহার মামলার আবেদন করেন।

পরে সন্ধ্যায় মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আগামী ৯ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন আদালত।

মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর, ভিকটিমের বান্ধবী সুজানা তাবাসসুম সালাম, আফতাব, শাখাওয়াত, আসওয়াদ, বাড়ির মালিক কামরুল হক ও কেয়ারটেকার রিপন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাদীর ছেলে ফারাইজি গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসেন।

দেশে আসার পর মায়ের সঙ্গে সুজানা, আফতাব, শাখাওয়াত ও আসওয়াদকে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। মাঝে মধ্যে সুজানা ফারাইজির সঙ্গে দেখা করতে বাসায় যেতেন। তারা বাসায় গিয়ে নেশা করতেন। বিষয়টি জানতে পেরে শামিমুন নাহার সুজানাকে ফারাইজির সঙ্গে দেখা করতে ও বাসায় যেতে নিষেধ করেন।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা বাসায় এসে মা-ছেলেকে গালিগালাজ ও আঘাত করেন। পরে ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ গিয়ে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মীমাংসা করে দেয়।

এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাদী শামিমুন নাহার এবং তার ছেলে গুলশানে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে আসামিরা তাদের ওপর আক্রমণ করেন। এ ঘটনায় তারা আহত হন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন।

ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসি তয়াছের জাহান এবং এসআই মশিউর ফারাইজির বাসায় সুজানাকে নিয়ে যান। তারা সুজানার সঙ্গে ফারাইজিকে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রাখতে বলেন। অন্যথায় ফারাইজি দেশে থাকতে পারবে না বলে হুমকি দেন।

জানা যায়, ফারাইজি গত ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনের অনুষ্ঠান পালন করতে বাসা থেকে বের হন। রাত পৌনে ১২টায় বাসায় ফেরেন। এ সময় তার সঙ্গে সুজানা, আফতাব, শাখাওয়াত ও আসওয়াদ ছিলেন। এতে ফারাইজির মা রাগান্বিত হয়ে তাদের বাসা থেকে বের হতে বলেন। তখন সুজানা ফারাইজিকে বলে তাদের বাসায় পৌঁছে দিতে। ফারাইজি তার অনুরোধে আসামিদের সঙ্গে যায়। পরবর্তীতে ফারাইজি আর বাসায় ফেরেননি।

ফারাইজির কোনো হদিস না পেয়ে তার মা ভাটারা থানায় যান। এসি তয়াছের জাহানের কাছে সুজানার ঠিকানা জানতে চান। তখন এসি জানান, আসামির বিষয় ও ঠিকানা তিনি জানেন না। এরপর ২৭ ডিসেম্বর তার মার কাছে ভাটারা থানা থেকে ফোন আসে, তার ছেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত ১ জানুয়ারি ময়নাতদন্ত শেষে ফারাইজির মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

এরপর গত ২ জানুয়ারি ফারাইজির মা যেখান থেকে ছেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাসায় যান। কিন্তু বাড়ির মালিক কামরুল হক (বাড়ির মালিক) ও কেয়ারটেকার রিপন তাকে বাসায় ঢুকতে না দিয়ে হত্যার হুমকি দেন। পরদিন ৩ জানুয়ারি তিনি ভাটারা থানায় মামলা করতে গেলে এসি তয়াছের জাহান ও এসআই মশিউর মামলা না নেওয়ার হুমকি দেন।

ফারাইজির মার অভিযোগ, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে হত্যা করেছেন। পরিকল্পিতভাবে হত্যার আলামত নষ্ট করে এবং তাকে হুমকি দিয়ে আসছেন। ৪৫ দিনেও থানা মামলা না নেওয়ায় মার্কিন দূতাবাসের পরামর্শে আদালতে মামলা করেন বলে জানান তিনি।

** মার্কিন নাগরিক হত্যা: পুলিশের এসিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা
** মার্কিন নাগরিক ফারাইজি হত্যা: মামলার তদন্তে পিবিআই

বাংলাদেশ সময়: ০১০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
পিএম/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।