ছুটির দিনে সারাদেশে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ময়মনসিংহে আট, লালমনিরহাটে দুই, নাটোরে চারজন ও দিনাজপুরে দুজন রয়েছেন।
শুক্রবার (২০ জুন) ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
বাংলানিউজের স্টাফ ও ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো খবর:
ময়মনসিংহ: জেলার ফুলপুরে বাসের ধাক্কায় মাহিন্দ্রার ৬ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। দুর্ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ সড়কের ফুলপুর উপজেলার কাজিয়াকান্দা ইন্দিরারপার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিচয় জানা যায়নি।
ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাদি এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একই দিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালধর বাজার এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন।
হতাহতরা সবাই অটোরিকশার যাত্রী। তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে কারও পরিচয় জানা যায়নি।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. টিপু সুলতান বলেন, একটি অ্যাম্বুলেন্স হালুয়াঘাট উপজেলার দিকে যাচ্ছিল। পথে তারাকান্দার কোদালধর বাজার এলাকায় এলে ময়মনসিংহগামী যাত্রীবাহী একটি অটোরিকশার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুজন নিহত এবং তিনজন আহত হন। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
লালমনিরহাট: জেলার পাটগ্রাম পৌরসভার মির্জারকোট এলাকায় পিকআপ ভ্যানচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত হয়েছেন।
দুপুরের দিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- পাটগ্রাম পৌরসভার মির্জারকোট এলাকার আলিউল হোসেনের ছেলে মেরাজুল ইসলাম (২৫) ও একই এলাকার একরামুর হকের ছেলে অনিক মিয়া (২৪)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুম্মার নামাজ পড়তে মোটরসাইকেল যোগে পাটগ্রাম শহরের দিকে যাচ্ছিলেন দুই বন্ধু মেরাজুল ও অনিক। পথে মির্জারকোট এলাকায় এলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকাআপভ্যান তাদের মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মেরাজুলের মৃত্যু হয় এবং গুরুতর আহত হন অনিক। স্থানীয়রা অনিককে উদ্ধার করে প্রথমে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে তার মৃত্যু হয়।
বড়খাতা হাইওয়ে থানার ওসি আবু সাঈদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নাটোর: জেলা শহরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকায় বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২০ জুন) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে একজন হলেন জেলা সদর উপজেলার হারিগাছা গ্রামের অটোরিকশাচালক মো. বাবু (৪০)। অপর তিনজন হলেন- ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাগর (৩৫) ও তার আত্নীয় রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম (৪৫) এবং অপরজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি (৪০)।
হাইওয়ে পুলিশের ঝলমলিয়া ফাঁড়িতে কর্মরত এসআই মো. আবুল কালাম এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, বিকেলে অটোরিকশার চালক রাজশাহী থেকে যাত্রী নিয়ে নাটোরের দিকে আসছিলেন। একই সময়ে সিরাজগঞ্জ থেকে রাব্বি পরিবহন নামে যাত্রীবাহী একটি বাস রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিল। পথে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে নাটোর শহরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকায় এলে বাসের সঙ্গে অটোরিকশাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটিতে থাকা যাত্রী জাবি শিক্ষার্থী সাগর ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং অপর তিনজন গুরুতর আহত হন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে অটোরিকশা চালক বাবুর মৃত্যু হয়। আহত দুজনের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর আহত যাত্রী নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে তাকেও রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পরপরই ঘাতক বাসচালক ও হেলপার পালিয়ে গেছেন। তবে ঘটনাস্থল থেকে বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
দিনাজপুর: জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক দুটি ট্রেনে কাটা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
সকালে চিরিরবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
নিহতরা হলেন- চিরিরবন্দর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের আফজাল হোসেনের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা (৬০) ও পশ্চিম সাইতাড়া গ্রামের গফুরশাহ পাড়ার এন্তাজুল হকের ছেলে জিয়াবুর রহমান (৪০)।
স্থানীয়রা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আঞ্জুমান আরা রেলস্টেশনের পাশের রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় পার্বতীপুরগামী দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় তিনি কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এর কিছু ঘণ্টা পর, দুপুর ১২টার দিকে একই স্থানে পঞ্চগড়গামী ‘বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি স্টেশনে প্রবেশের সময় জিয়াবুর রহমান ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন। এসময় ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
দিনাজপুর রেলওয়ে থানার ওসি রায়হান আলী জানান, নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুটি পৃথক অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এনডি/এসআরএস