কুষ্টিয়া: ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়ে সাড়া না পেলে সেগুলো ‘আনসেন্ট’ করে দেন। রাতের বেলায় ফোন দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন এবং নিজেকে ‘বন্ধু’ পরিচয়ে ঘনিষ্ঠ হতে চান।
এছাড়া একাধিক নারী শিক্ষার্থীকে কুপ্রস্তাব ও গভীর রাতে ফোনসহ হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।
ওই শিক্ষকের নাম ড. আজিজুল ইসলাম। তিনি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। এসব অভিযোগ তুলে সম্প্রতি বিশ^বিদ্যালয়ে ২৩ জন নারী শিক্ষার্থী ওই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নামজুল হুদার কাছে লিখিত আকারে দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করেছেন, শিক্ষক আজিজুল ইসলাম মেয়েদের গভীর রাতে কল দিয়ে বিরক্ত করেন। বিশেষ করে তিনি মেসেঞ্জারে কল দেন, যাতে ফোনকল রেকর্ড করা না যায়। নিজেকে নারী শিক্ষার্থীদের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিয়ে ঘনিষ্ঠ হতে চান।
অভিযোগকারীরা উল্লেক করেন, মেসেঞ্জারে কল ও বিভিন্ন উত্ত্যক্তকর বার্তা পাঠানোর পর সাড়া না পেলে তিনি প্রমাণ মুছে ফেলতে বার্তাগুলো আনসেন্ট করে দেন। ক্লাসরুমে তিনি মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবন বিশেষ করে বিবাহিত মেয়েদের দাঁড় করিয়ে দাম্পত্যজীবন এবং স্বামীর সঙ্গে বোঝাপড়া নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেন।
মেয়েদের তার চেম্বারে একা ডেকে নিয়ে কুপ্রস্তাব দেন তিনি। এতে রাজি না হলে পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন, যাতে শিক্ষার্থীরা বাইরে কিছু বলার সাহস না পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, একটি কোর্সে রিটেক থাকায় স্যার আগের দিন আমাকে রুমে ডেকে নিয়ে বলেন যে রিটেকের প্রশ্ন ও খাতা দেখার দায়িত্ব তার। সেই সুযোগে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তিনি আমাকে হয়রানি করেন, শরীর নিয়ে কমপ্লিমেন্ট দেন এবং পরীক্ষার দিন বারবার কল দিলেও আমি রিসিভ না করায় পরদিন রুমে ডেকে রেজাল্ট খারাপ করে দেওয়ার হুমকি দেন।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, উনার (ড. আজিজুল ইসলাম) সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব।
আর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অভিযোগগুলো শুধু বিভাগের সভাপতির কাছেই জমা দিয়েছি। অভিযোগের পর অভিযুক্ত শিক্ষককে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, কিন্তু আমরা এতে সন্তুষ্ট নই। আমরা চাই, তাকে স্থায়ীভাবে শিক্ষকতা থেকে বরখাস্ত করা হোক।
এ ব্যাপারে ড. আজিজুল ইসলাম বলেন, ক্লাস ও পরীক্ষার ব্যাপারে আমি খুবই আন্তরিকভাবে কাজ করি। করোনাকালে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি থাকাকালে কয়েকজন শিক্ষার্থী আর্থিক অস্বচ্ছলতার কথা বলে আবেদন করেছিল। সে জন্য আমি তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অভিভাবকেরা বিষয়টি অস্বীকার করেন। সেখান থেকেই তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
তিনি বলেন, ক্লাসে দেরি করে এলে আমি উপস্থিতির নম্বর দিই না, টিউটোরিয়ালেও যা পায় তাই দেই। এ জন্যই তারা হয়তো ক্ষিপ্ত হয়ে এসব অভিযোগ এনেছে।
গভীর রাতে ফোনকল দেওয়ার প্রসঙ্গে আজিজুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় স্টুডেন্টরা ফোন দেয় ক্লাসের সময় জানার জন্য। সেই সময় ফোন ধরতে না পারলে আমি পরে ফোন করে জানিয়ে দেই। এর বাইরে কিছু না।
তবে রাগের মাথায় হয়তো কখনো বকাঝকা করেছি, সেটা আমার ভুল হয়ে থাকতে পারে-উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু কোনো মেয়েকে আমি খারাপভাবে কিছু বলিনি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজমুল হুদা বলেন, প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। একাডেমিক কমিটির সভায় নিয়ম অনুসারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আপাতত তাকে বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এসএইচ