ঢাকা, শুক্রবার, ৩ আশ্বিন ১৪৩২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

সাতক্ষীরাসহ ১২ জেলায় ৮টি আইনে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার পথ বেছে নিয়েছে সরকার  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৩৮, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫
সাতক্ষীরাসহ ১২ জেলায় ৮টি আইনে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার পথ বেছে নিয়েছে সরকার  

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরাসহ দেশের ১২টি জেলায় পাঁচটি দেওয়ানি ও তিনটি ফৌজদারিসহ মোট আটটি আইনের বিরোধ নিষ্পত্তিতে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার পথ বেছে নিয়েছে সরকার। এসব আইনে আজ থেকে (১৮ সেপ্টেম্বর) সরাসরি মামলা নেবে না আদালত।

এজন্য সংক্ষুদ্ধ পক্ষকে প্রথমে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে মধ্যস্থতার চেষ্টা করতে হবে। কেবল মধ্যস্থতায় ব্যর্থ হলে মামলা করা যাবে আদালতে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে সাতক্ষীরা জেলাসহ দেশের ১২টি জেলায় ১৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হবে। এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তিও ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করেছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা।

জেলাগুলো হলো, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি, সিলেট, মৌলভীবাজার এবং সুনামগঞ্জ।

লিগ্যাল এইড অফিসে মধ্যস্থতায় নিষ্পত্তিযোগ্য ধারাগুলো হলো- পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ এর ৫, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১, সহকারী জজ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত বণ্টন সম্পর্কিত বিরোধ, স্টেট অ্যাকুজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০ এর সেকশন ৯৬ এ উল্লিখিত অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিরোধ, নন-এগ্রিকালচারাল টেন্যান্সি অ্যাক্ট ১৯৪৯-এর সেকশন ২৪ এ উল্লিখিত অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিরোধ, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩ এর ধারা ৮ অনুসারে পিতা-মাতার ভরণপোষণ সম্পর্কিত বিরোধ, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ এর ধারা ৩ ও ৪ এ যৌতুক সম্পর্কিত অভিযোগ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ধারা ১১(গ)তে বর্ণিত যৌতুকের জন্য নির্যাতন সম্পর্কিত অভিযোগ।

জানা গেছে, ভুয়া মামলা কমানো, মামলার চাপ হ্রাস এবং বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি কমানোর উদ্দেশ্যে ২০০০ সালের আইনগত সহায়তা প্রদান আইন সংশোধোনের মাধ্যমে অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ নামে একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। যা গত ১ জুলাই আইন ও বিচার বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

দেশের আইন অঙ্গনে বছরের পর বছর মামলার চাপ বাড়ছে। মানলার চাপ কমানো, নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানি থেকে মুক্তি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি লাঘবের কথা বিবেচনা করেই এই আটটি আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, লিগ্যাল এইড অফিসে মধ্যস্থতার প্রধান সুফল হলো এর ফলে বিচারপ্রার্থীদের জন্য একটি দ্রুত, সহজ ও সাশ্রয়ী উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ তৈরি হবে। লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে একজন বিচারকের তত্ত্বাবধানে বিরোধ নিষ্পত্তি হবে এবং পক্ষদ্বয় উপকৃত হবে।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের সরকারি কৌশলী (জিপি) অসীম কুমার মন্ডল বলেন, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জমি জায়গা সংক্রান্ত দেওয়ানি মামলার কারণে একাধিক ফৌজদারী মামলার সৃষ্টি হয়। এজন্য পাঁচ প্রকারের দেওয়ানি মামলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আপোস মীমাংসার চেষ্টা করা হলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং মামলা জট কমবে।

তবে, এই প্রক্রিয়া কতটুকু স্বস্তিদায়ক হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী এটিএম ফখরুল আলম বাবু বলেন, লিগাল এইড অফিসে যাওয়া মানে এক নতুন প্রক্রিয়া শুরু হওয়া, যা মামলা শুরুর পূর্বে বাড়তি সময় ও জটিলতা সৃষ্টি করবে। ফলে বিচারপ্রার্থীকে আরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে।

সাতক্ষীরা জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেত্রী ফরিদা আক্তার বিউটি বলেন, একজন নারীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করার পর সে কি মধ্যস্থতা করতে যাবে? নারীরা সমাজ ও পরিবারে এমনিতেই দুর্বল পক্ষ। এখন এ আইনে তাদের আরও দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। একজন মানুষ আগে যেখানে অন্যায় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনের আশ্রয় নিতে পারতো, এখন তাকে লিগ্যাল এইড অফিসে মধ্যস্থতার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।

 

এমআরএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।