তুরস্কের অভিযানের শুরুতে বিষয়টিতে রাশিয়ার ‘সমর্থন’ আছে বলে প্রচার হলেও মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সিরিয়ায় নিযুক্ত মস্কোর বিশেষ দূত আলেকসান্দর লেভরেন্তেভ উল্টো সুর ধরে বলেন, তুরস্কের এ সামরিক অভিযান ‘অগ্রহণযোগ্য’। এবার কেবল ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্যে আবদ্ধ না থেকে রুশ বিশেষ দূত বলেছেন, যে করেই হোক, সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত এড়াতে হবে তুরস্কের সৈন্যদের।
আবুধাবি সফররত আলেকসান্দর লেভরেন্তেভ বুধবার (১৬ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ইঙ্গিত দেন যে, মস্কো আশা করছে আঙ্কারা তাদের সামরিক অভিযান শিগগির গুটিয়ে নেবে।
কুর্দি বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সংগঠন পিকেকে-কে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা অনেক দেশ ও সংগঠন। তুরস্ক মনে করে, পিকেকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তাদের সিরিয়া সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় তুরস্কের অখণ্ডতা ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা (বিচ্ছিন্নতাবাদ কায়েম) চালাচ্ছে। সেজন্য বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে খগড়হস্ত হয়েছে তুরস্কের সামরিক বাহিনী।
যদিও আবার যুক্তরাষ্ট্রকে কুর্দিদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বাঁধার পর আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আসা যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ওই অঞ্চল থেকে নিজেদের সৈন্যদের সরিয়ে নিলে গত ৯ অক্টোবর থেকে কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ শুরু করে তুরস্ক।
আঙ্কারার দাবি, ওই অঞ্চলে কুর্দি নিয়ন্ত্রণ হটিয়ে সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও তৎসংলগ্ন তুরস্ক সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। তারা চায় ইউফ্রেতিস নদীর পূর্বাংশ কুর্দি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে। পরবর্তীতে সেখানে তুরস্কে আশ্রিত সিরীয় শরণার্থীদের পুনর্বাসিত করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে আঙ্কারা।
তুরস্কের সিরিয়া সীমান্তে অভিযানে সবচেয়ে বড় নির্ধারকের ভূমিকায় এখন দেখা হচ্ছে রাশিয়াকে। আইএস দমনের নাম করে রাশিয়া সিরিয়ার যুদ্ধময়দানে এলেও মনে করা হয়ে থাকে তারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের গদি রক্ষা করতেই এসেছে। আসাদকে ক্ষমতা থেকে নামাতে যে বিদ্রোহীরা লড়াই চালিয়ে আসছিল, তারা ধীরে ধীরে ক্ষমতা হারিয়ে ফেললেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছিল সবার। ‘নিজেদের ভূমি’ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট কুর্দি বিদ্রোহীদেরও লড়তে হচ্ছিল আইএসের সঙ্গে। তুরস্কের অভিযানের মুখে সেই কুর্দি বিদ্রোহীরা আসাদের বাহিনীর সঙ্গে ‘আপস’ করে তাদের সীমান্তে ডাকলে দৃশ্যপটে আসতে হয় রাশিয়াকে।
তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে ১৯৯৮ সালে ‘আদানা প্যাক্ট’ নামে একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুসারে সিরিয়ার ১০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযান পরিচালনার অধিকার রয়েছে তুরস্কের।
ওই অধিকারের বিষয়টি উল্লেখ করলেও রুশ বিশেষ দূত আলেকসান্দর লেভরেন্তেভ বলেন, ‘তার মানে এই নয় যে- সিরিয়ার স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার অধিকার রয়েছে তাদের। সিরিয়ার ভূখণ্ডে তুরস্কের সৈন্যদের স্থায়ী অবস্থানের বিরোধী আমরা। আমরা তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করি না। ’
রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ দূতের ব্রিফিংয়ের পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগানকে ফোন করে কথা বলেছেন। আলাপে তিনি পরিস্থিতি ‘ঘোলাটে’ হয়ে ওঠার কথা বলেন। পুতিন জানান, সিরিয়ার কুর্দিদের হাতে কয়েকশ’ আইএস জঙ্গি বন্দি ছিল। কিন্তু তুরস্কের সামরিক অভিযানের কারণে কুর্দিরা বেকায়দায় পড়ে গেলে ওই জঙ্গিরা হাঙ্গামা বাঁধিয়ে পালিয়ে যায়। এমনকি জরুরি আলাপের জন্য এরদোগানকে কয়েকদিনের মধ্যে রাশিয়া সফরেরও আমন্ত্রণ জানান পুতিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
এইচএ/