ঢাকা: ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পরপরই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে নারায়ণগঞ্জের চনপাড়ার বস্তি। ওই বস্তির কাছাকাছি ফারদিনের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়ায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেন চনপাড়ার বস্তিতে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
ডিবি জানায়, নিখোঁজ হওয়ার আগে ফারদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একা একাই ঘুরে বেরিয়েছেন। তদন্তের এ পর্যায়ে বোঝা যাচ্ছে, ফারদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি। তিনি হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছেন।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ।
ডিবি প্রধান বলেন, ফারদিনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ফারদিন তার বান্ধবী বুশরাকে রামপুরা নামিয়ে দেওয়ার পর ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছেন। তিনি কেরানীগঞ্জ ব্রিজের পাড়ে গেছেন। এ সময় তিনি অনেকের সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলেছেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে তার সঙ্গে আমরা দেখতে পায়নি।
পুরোটা রাত ফারদিন এলোমেলো ঘুরে বেরিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিস্টার্ব মাইন্ড না থাকলে কেউ এভাবে ঘুরে বেড়ায় না। রামপুরা থেকে কেরানীগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ থেকে জনসন রোড, জনসন রোড থেকে গুলিস্তান, গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী এরপর তার নিজের বাসা পার হয়ে চলে যান ডেমরা ব্রিজে।
যাত্রাবাড়ী থেকে বহনকারী লেগুনাচালককে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা যে লেগুনাচালককে গ্রেফতার করেছিলাম, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন কোনোভাবেই তার লেগুনা চনপাড়ার দিকে যায়নি। কারণ লেগুনা ২টা ৩৪ মিনিটের দিকে ফারদিনকে নিয়ে গেছে ডেমরা ব্রিজের কাছাকাছি। তবে চনপাড়া যায়নি, এটা আমাদের তদন্তে পরিষ্কার। তাকে কেউ ধরে নিয়ে গেছেন অথবা তিনি নিজে থেকেই চনপাড়া গেছেন এ ধরনের কোনো আলামত বা সিসিটিভি ফুটেজও আমরা পায়নি।
ডিবি প্রধান বলেন, ফারদিনের রেজাল্ট ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছিল। প্রথম সেমিস্টারে ৩.১৫ তারপর কমতে কমতে ২.৬৭ হয়। যেটা বাসার লোকজন বা আত্মীয়-স্বজন কেউ জানতো না। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে স্পেন যাওয়ার জন্য তার ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল। যেটা জোগার করতে হিমশিম খাচ্ছিল, যদিও তার বন্ধুরা ৪০ হাজার টাকা দেয়। বুশরাও জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের জানিয়েছিলেন ফারদিন হতাশায় ভুগছিলেন।
ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের পর চিকিৎসক যে কথাটি বলেছিলেন, সে তথ্য আমরা পায়নি। তাকে ধস্তাধস্তি হয়েছিল এমন বা তার শরীরে ছেঁঁড়াফাটা মারধরের দাগও আমরা দেখতে পায়নি। সুরতহালে কোনো আঘাতের চিহ্নও পায়নি।
বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ, ফারদিনের মৃত্যুর রাতে তার ঢাকা শহরে ছোটাছুটি, ব্রিজের কাছ পর্যন্ত যাওয়া, তার হতাশা, মানসিক অবস্থা সবমিলিয়ে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে এটা একটা ‘সুইসাইড কেস’।
হারুন-অর-রশীদ বলেন, ব্রিজের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিয়েছিলেন ফারদিন, সেখানেই ছিল তার সর্বশেষ অবস্থান। এরপর সেখান থেকে একটা পানির শব্দ হয়েছে। সেখান থেকেই আমরা মনে করছি এটা একটা ‘সুইসাইড’।
প্রায় একইভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যার আগে সারা রাত ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় একা একা ঘুরে বেরিয়েছিল। ফারদিনও একা একা ঘুরে বেরিয়েছেন উদ্দেশ্যহীনভাবে। বুশরাকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে নামানোর পর উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেরিয়েছেন এবং কারো সঙ্গেও দেখা করেননি তিনি।
ফারদিনের এক বছরের ফোনকল লিস্টের সিডিআর পর্যালোচনা করলে আগে কখনও এমন দেখা যায়নি বলেও জানান ডিবি প্রধান।
আরও পড়ুন>> আত্মহত্যা করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন: ডিবি
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
পিএম/এএটি