ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দেশ লজ্জায় পড়ে এমন কাজ করিনি, করব না: শেখ হাসিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
দেশ লজ্জায় পড়ে এমন কাজ করিনি, করব না: শেখ হাসিনা সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

ঢাকা: দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মানুষকে উন্নত জীবন দিতে কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা  জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা, ভাই-বোন সব হারিয়েছি। সেই হারানোর বেদনাকে সম্বল করেই কিন্তু এদেশে এসেছি, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য। এখানে দুর্নীতি করে পয়সা বানাব, নিজের জীবন মান নিয়ে থাকব- এর জন্য তো আসিনি।

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ এবং পরে তা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, বাংলাদেশের মানুষের মাথা নিচু হোক, মুখ ছোট হোক, বাংলাদেশ কোথাও লজ্জায় পড়ে, অন্তত আমি বা আমার পরিবার, আমরা কেউ এ ধরনের কাজ করিনি, করব না। দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি।  

তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। ফেডারেল কোর্ট কানাডা রায় দিয়েছে। এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। বিশ্ব ব্যাংকের সমস্ত অভিযোগ ভুয়া ও মিথ্যা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একটিই লক্ষ্য, বাংলাদেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেওয়া। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, দেশে আইনের শাসন হবে, মানুষ ন্যায় বিচার পাবে, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে। বাংলাদেশের মানুষ মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।  

কেউ যেন বিচারহীনতায় কষ্ট না পায়

ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই, আমাদের মতো কেউ যেন আর বিচারহীনতায় কষ্ট না পায়। বাবা-মা, ভাই-বোন মারা গেল, আর আমরা বিচার চাইতে পারব না। আবার তাদেরই গণতন্ত্রের ধারক-বাহক বলা হয়। এটি সত্যিই জাতির জন্য, দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। এই রকম অবস্থায় যেন বাংলাদেশ আর কোনোদিন না পড়ে।  

তিনি বলেন, আমি এটুকুই বলবো যে, আমাদের আইনজীবীরা অপরিহার্য আমাদের জন্য। কাজেই আইনজীবীদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, তারা যেন তাদের মেধা, প্রতিভা, সততা, আন্তরিকতা দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করেন।

আদালতের স্বাধীনতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব সময় প্রচেষ্টা ছিল যে, সর্বোচ্চ আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। এর আর্থিক ব্যবস্থাপনা আগে ছিল সরকার প্রধানের হাতে সেটা কিন্তু সম্পূর্ণভাবে আমরা সুপ্রিম কোর্টের হাতে দিয়ে দিই। আলাদা বাজেট বরাদ্দ দিই, সঙ্গে আমাদের বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ সেটাও আমরা কার্যকর করে নীতিমালা প্রণয়নের ব্যবস্থা করি। স্থায়ী আইন কমিশন গঠন করি।  

আইন বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, একটি আইন বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব অনেকে দিয়েছেন। আমার মনে হয় সেটাও আমরা করে দেব। এটি একান্তভাবে সবার জন্য দরকার।  

আরও পড়ুন: কোনো দেশ ষড়যন্ত্র করলে প্রতিবাদও করতে জানি: প্রধানমন্ত্রী

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুকেশ কুমার রাসিক ভাই শাহ, বাংলাদেশে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক, আপিল বিভাগের বিচারক ওবায়দুল হাসান।

অনুষ্ঠানে ৬টি ক্যাটাগরিতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা তথা নিম্ন আদালতের বিচারকদের ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পদকপ্রাপ্তরা স্বর্ণপদক নেন।

ব্যক্তিগতভাবে পদক পাওয়া পাঁচ ক্যাটাগরির বিচারক হলেন- জেলা ও দায়রা জজ ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছা, অতিরিক্ত জেলা জজ ক্যাটাগরিতে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাউদ হাসান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ক্যাটাগরিতে নওগাঁর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. খোরশেদ আলম, সিনিয়র সহকারী জজ ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ মোসা. রেশমা খাতুন ও সহকারী জজ ক্যাটাগরিতে রংপুরের সহকারী জজ মো. হাসিনুর রহমান মিলন।

আর দলগতভাবে পদক পাওয়া জেলা হলো- ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ। এই জেলার পক্ষে জেলা ও দায়রা জজ হেলাল উদ্দিন পদক নেন।

ব্যক্তিগতভাবে পদক পাওয়া প্রত্যেককে ২২ ক্যারেট ১৬ গ্রাম স্বর্ণের পদক এবং দুই লাখ টাকার চেক এবং ময়মনসিংহ জেলাকে ২২ ক্যারেট ১৬ গ্রাম স্বর্ণের পদক এবং পাঁচ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওপর একটি ডকুমেন্টরি বা তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ৫০ টাকার একটি স্মারক নোট অবমুক্ত করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
এমইউএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।