ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

খেলার মাঠ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৩
খেলার মাঠ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি

বরিশাল: বরিশাল নগরের কাউনিয়ার সেকশন মাঠ রক্ষার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুলাই) দুপুরে বরিশাল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন স্মারকলিপি গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

মাঠ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব তৌসিক আহমেদ রাহাত স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বরিশালের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার খেলার মাঠগুলো দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে পাড়া মহল্লায় খেলার মাঠের সংকট দেখা নিয়েছে। মাঠে খেলাধুলা করতে না পারায় শিশু-কিশোরদের শারীরিক, মানসিক বিকাশে ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি কাউনিয়া সেকশন রোডের একমাত্র খেলার মাঠটিতে জেলা পুলিশ প্রশাসন লিজ নিয়ে গোডাউন ও স্টল নির্মাণের জন্য সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, নগরের ৭ ও ২ নম্বর এবং চার নম্বর ওয়ার্ডের সেকশন মাঠই একমাত্র ভরসা। শিশু কিশোরদের কল-কাকলীতে মুখরিত এই মাঠটি দখল হয়ে গেলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তাদের ওপর। তাই এ অঞ্চলের অভিভাবক, সংগঠক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ সর্বোপরি বরিশালের নাগরিকবৃন্দ লিজ বাতিলসহ খেলার মাঠটি শিশু কিশোরদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন। মাঠটি রক্ষায় আমরা এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছি। যার অনুলিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি ও পুলিশ সুপার বরাবর দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা রয়েছে কোনো খেলার মাঠে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করে যেন নষ্ট করা না হয়। তাই সেকশনের মাঠটি রক্ষায় আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

স্থানীয়রা জানান, নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সেকশন রোডের আসমত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ৫৬ শতাংশের একটি খালি সরকারি জমি রয়েছে। এক সময়ে জেলা পুলিশ ওই জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে জমির দক্ষিণাংশে পুলিশ ফাঁড়ির স্থাপনা নির্মাণ করেছিল। আর ফাঁকা অংশটি মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বরিশালর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন হলে জেলা পুলিশে ফাঁড়ি গুটিয়ে নেয়। সরকারি ওই সমতল জমিটিতে এলাকার শিশু কিশোরের খেলাধুলা, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং মৃত ব্যক্তির জানাজা এই মাঠে হয়ে থাকে।

হঠাৎ করে জুন মাসের প্রথম দিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মাঠে উত্তর পাশে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। এতে লেখা রয়েছে, জেলা পুলিশ নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত দোকান/গোডাউন বরাদ্দ চলছে। তারা ওই ওয়ার্ডে একমাত্র খেলার মাঠটি নষ্ট করে দোকান ঘর ও গোডাউন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দা নগরীর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। মাঠটি রক্ষার্থে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট মাঠ রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়।

মাঠরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক রেজাউল হক হারুন বলেন, সেকশন মাঠের ওপর নির্ভর করে ১৯৬৯ সালে শুকতারা খেলাঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে দুটি বিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয় এই মাঠের ওপর ভরসা করে। ৭ নম্বর ওয়ার্ড পুরোটা ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাংশে বর্তমানে কোনো মাঠ নেই। পুলিশ দোকান ঘর ও গোডাউন নির্মাণ করলে দুই ওয়ার্ডবাসী শেষ সম্বল সেকশন মাঠটি হারাবে।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের জেলা সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, সেকশন মাঠ নামক জায়গাটি মূলত অর্পিত সম্পত্তি। পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পরিস্থিতির কারণে ফাঁড়ি স্থাপনে পুলিশকে এটি ইজারা দেওয়া হয়। ফাঁড়ি বিলুপ্ত হয়েছে অনেক বছর আগে। এখন জনস্বার্থে সম্পত্তিটি সংলগ্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধীনে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে বরিশালের পুলিশ সুপার (এসপি) ওয়াহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৬৪ সাল থেকে ওই সম্পত্তির মালিক জেলা পুলিশ। জমির একাংশের ওপর স্থানীয়রা মসজিদ ও মাদ্রাসা করেছেন। অবশিষ্ট মাঠ বছরের বেশিরভাগ সময় পানিতে তলিয়ে থাকে। বছরে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা পুলিশকে খাজনা দিতে হয় এ মাঠের জন্য। সেজন্যই মাঠে জেলা পুলিশ স্টল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয়দের কোনো দাবি থাকলে সেটি নিয়েও ভাবা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৩
এমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।