ঢাকা: সালমার আর্তনাদে এটুকু বোঝা গেলো তার কোনো স্বজন মারা গেছেন। বিলাপ করে যাচ্ছেন, ‘প্যাটের দায়ে কামে আইছে/ কাম কর’তে কর’তে হইলো লাশ।
শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এক বছর বয়সী কোলের ছেলেকে নিয়ে আর্তনাদ করে যাচ্ছেন তিনি।
অবুঝ শিশুকেও বোঝাতে চেষ্টা করছেন সালমা, তার বাবা আর ফিরবেন না। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
সন্তানের সঙ্গেও বিলাপ করে যাচ্ছেন, ‘খা বাবা, দুধ খা, কিছু দিন পরে দুধও থাকবো না, না খাইয়া থাকন লাগবো’।
জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ কান্দার গ্রামের আবু তালেবের ছেলে আবু সাঈদ (৩৫)। পেশায় রাজমিস্ত্রি। কাজ করতে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকায় যান। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কাজ করার সময় দেয়াল চাপায় আহত হন তিনি।
প্রথমে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, অবনতি হলে ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার কর্তব্যরত চিকিৎসক সাঈদকে মৃত ঘোষণা করলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই মরদেহ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন সালমা, তার শাশুড়ি হাজেরা ও অন্য স্বজনরা।
বিষয়টি জানতে পেরে বাধা দেয় মেডিকেল ক্যাম্প পুলিশ। কিন্তু কোনো যুক্তিই মানতে নারাজ সালমা। ‘বাবা গো, দ্যান লাশ লইয়া যাই। ভাই গো, লাশটা দ্যান লইয়া যাই’, বিলাপের সুরে বারবার অনুরোধ জানাতে থাকেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেই বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সালমা। তাদের গোল করে ঘিরে থাকা অন্য রোগীর স্বজন, স্থানীয় চা দোকানিদেরও বলতে শোনা যায়- মানুষ মারা গেছে, মরদেহ নিয়ে যাবে। এতে বাধা দেওয়ার কী আছে!
এ প্রসঙ্গে মেডিকেল ক্যাম্প পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা পুলিশ কেস দেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে পুলিশকে জানিয়ে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ নিয়ে মরদেহ নিতে হবে।
নিহত ব্যক্তির স্বজনরা আবেদন করলে পুলিশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করতে পারে। এসব ‘ফরমালিটিজ’ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কাজ মরদেহ সংরক্ষণ করা, যোগ করেন মোজাম্মেল।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৬
এজেডএস/এটি/এসএস