ঢাকা, বুধবার, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

রানা প্লাজা ট্রাজেডি

এতিম ৪৪ শিশুর আশ্রয় অরকা হোমসে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
এতিম ৪৪ শিশুর আশ্রয় অরকা হোমসে রানা প্লাজা ট্রাজেডি: এতিম ৪৪ শিশুর আশ্রয় অরকা হোমসে

গাইবান্ধা: ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। দেশে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ‘রানা প্লাজা ধস’। যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। সরকারি হিসেব মতে এ দুর্ঘটনায় নিহত হন এক হাজার ১৭৫ জন নারী-পুরুষ। আহত হন প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই।

এতে অনেক শিশু হারিয়েছে মাকে, কেউ বা বাবাকে, আবার অনেকে বাবা-মা দু’জনকেই হারিয়েছে। রানা প্লাজা ধসে নিহতদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ৪৪টি শিশু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে গাইবান্ধার ‘অরকা হোমস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে।

সেখানে লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও মাতৃস্নেহে বেড়ে উঠছে এসব এতিম শিশু।

২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে অরকা হোমস চালু হয়। তিনতলা ভবন বিশিষ্ট অরকা হোমসে লাইব্রেরি ও বিনোদনের ব্যবস্থাসহ রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ। প্রতিষ্ঠানটিতে ৪৪ এতিম শিশুর মধ্যে ২৩ জন ছেলে ও ২১ জন মেয়ে রয়েছে। এছাড়া পাশেই রয়েছে হোসেনপুর মুসলিম একাডেমি। যেখানে এসব শিশুরা তৃতীয় শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করছে।  

রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিহত বিভিন্ন জেলার এমন ৪৪টি এতিম শিশুর দায়িত্ব নিয়েছে অরকা হোমস। শুধু তাই নয়, এসব শিশুর পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিশুদের দেখভালের জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। পড়ালেখা শেষে তাদের কর্মসংস্থান ও মেয়েদের বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থাও করবে প্রতিষ্ঠানটি। এমনটিই জানালেন, অরকা হোমসের তদারকির দায়িত্বে থাকা হোসেনপুর মুসলিম একাডেমির উপাধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম।

তিনি জানান, সাভারের রানা প্লাজা ধসে নিহতদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। তাদের সন্তানদের মধ্যে ৪৪ জন অরকা হোমসে মাতৃস্নেহে বেড়ে উঠছে।  

অরকা হোমসে আশ্রয় নেয়া রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার অভিরাম গ্রামের আল আমিন (১২) জানায়, তার বাবা অনেক আগে মারা গেছে। এরপর মা ফাতেমা বেগম কাজ করতেন সাভারের রানা প্লাজায়। ভবন ধসের ঘটনায় মারা যান ফাতেমা। এরপর ২০১৫ সাল থেকে আল আমিনের ঠাঁই হয় অরকা হোমসে।
অরকা হোমস
আল আমিনের মতোই মাকে হারিয়ে অরকা হোমসে আশ্রয় নিয়েছে আলিফ মিয়া (১০)। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার ধানঘড়া গ্রামে। আলিফ বলে, জন্মের পরেই বাবাকে হারিয়েছি। এরপর মার (দুলালি বেগম) কাছে থাকতাম। কিন্তু ভবন ধসের ঘটনায় মাকে হারিয়ে আমি একা হয়ে পড়ি। আমার দায়িত্ব নেয়ার মতো কোনো স্বজন নেই। তাই আমার জায়গা হয় অরকা হোমসে। আমি এখানে খুব ভালো আছি।  

মা ফিরোজা বেগমকে হারিয়ে অরকা হোমসে আশ্রয় পেয়েছে পাবনার ইশ্বরদী উপজেলার খারমি গ্রামের স্বপন মিয়া।  

সে জানায়, এখানে খুব আনন্দের সঙ্গে আছে সে। এখানে লেখাপড়া ও খাওয়া-থাকার কোনো অসুবিধা নেই।

ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান এ অরকা হোমসের প্রতিষ্ঠাতা। এতে সহায়তা করছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।