ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুরছে চাকা উঠছে বালু, ভাঙছে জনপদ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৭
ঘুরছে চাকা উঠছে বালু, ভাঙছে জনপদ বাঙালি নদীতে এভাবেই চলছে বালু উত্তোলন/ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: কয়েকটি প্লাস্টিকের ড্রাম বিশেষভাবে একত্রে বাঁধা। এর ওপর বিছানো বাঁশের চটা। পানির ওপর ভাসিয়ে বাঁশের খুঁটি ও দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়েছে তা। তার ওপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বড় আকারের শ্যালোমেশিন। মেশিনের মুখে জোড়া দিয়ে লাগানো হয়েছে প্লাস্টিকের পাইপ।

এভাবে বাঙালি নদীতে শ্যালোমেশিন বসিয়ে দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। মেশিনের চাকা ঘুরছে আর পাইপ দিয়ে বালু গিয়ে পড়ছে নির্দিষ্ট স্থানে।

সেখানে বালুর স্তূপ জমা হচ্ছে। সেই বালু বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী চক্রটি।
 
বগুড়ার ধুনট উপজেলার নিমাগাছি ইউনিয়নের বাঙালি নদীর ধাপাচাপা ও জয়শিং ঘাট এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে নদীর তীরবর্তী বসতভিটা, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো ভাঙন ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
 
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা বাংলানিউজকে জানান, বাঙালি নদীর ধামাচামা ও জয়শিং ঘাট এলাকায় কোনো বালু মহাল নেই। তাই সেখান থেকে বালু তোলার কোনো সুযোগ নেই। এর আগে এসব অবৈধ বালু উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে কয়েকদফা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

সেখান ফের বালু উত্তোলন করা হলে খোঁজ-খবর নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যোগ করেন ইউএনও রাজিয়া সুলতানা।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বাঙালি নদী বহমান। নদীর উত্তর সীমানার পূর্ব তীর ঘেঁষে ধামাচাপা ও জয়শিং গ্রামের অবস্থান। প্রায় দেড় হাজারের মতো পরিবার বসবাস করে গ্রাম দু’টিতে। পাশাপাশি ফসলি জমি, স্কুল, কলেজ মাদরাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো রয়েছে সেখানে।
বাঙালি নদীতে এভাবেই চলছে বালু উত্তোলন/ছবি: আরিফ জাহান 
প্রত্যেক বছর দফায় দফায় গ্রাম দু’টি ভাঙনের শিকার হয়। কালের আবর্তে ভাঙনের কবলে পড়ে দু’টি গ্রামের অসংখ্য বসতভিটা ও ফসলি জমি বাঙালির পেটে চলে গেছে। বাস্তুভিটাহারা হয়ে অনেক পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। বাঙালির পশ্চিমে ফরিদপুর গ্রাম। এই গ্রামের ভাঙনের চিত্রটাও প্রায় একই রকম।
 
এই ভাঙনের নেপথ্যে শ্যালোমেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। সেই কাজটি অব্যাহত রয়েছে এখনও। জয়শিং গ্রামে ফরহাদ হোসেন, হাসান আলী ও ধামাচাপা গ্রামে সেলিম রেজা বাঙালির নদীর বুকে অবৈধভাবে শ্যালোমেশিন বসিয়ে দেদারছে বালু উত্তোলন করছেন। এসব বালু বিক্রি করে লুটে নিচ্ছেন বিপুল অঙ্কের টাকা।
 
স্থানীয়ভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস নেই নিরীহ এলাকাবাসীর। বছরের পর বছর এসব গ্রামের নিরীহ মানুষজন তাদের হুমকি-ধামকি সহ্য করে যাচ্ছেন।
 
আসাদুল ইসলাম, হরফ আলীসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে জানান, বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নেন না। উল্টো তখন অভিযোগকারীদের বিপদে পড়তে হয়। তাই এসব গ্রামের লোকজন বিষয়টি অনেকটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
 
বালু উত্তোলনকারী জয়শিং গ্রামের ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বালু উত্তোলনের ফলে বাঙালি নদী ভাঙছে না। প্রকৃতির নিয়মেই নদী ভাঙছে। দফায় দফায় সেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বালু উত্তোলনের কারণে এ পর্যন্ত কোনো বসতবাড়ি বা ফসলি জমি নদীতে ভেঙে পড়েনি। দাবি করেন এই বালু ব্যবসায়ী।
 
তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি নেই। তবে বাঙালি নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৭
এমবিএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।