ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

স্ত্রীর সহযোগিতায় স্বামীকে, দেখে ফেলায় মেয়েকেও খুন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৭
স্ত্রীর সহযোগিতায় স্বামীকে, দেখে ফেলায় মেয়েকেও খুন স্ত্রীর সহযোগিতায় স্বামীকে, দেখে ফেলায় মেয়েকেও খুন

ঢাকা: দুই সন্তানের মা আরজিনা বেগম পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে যান প্রতিবেশী শাহীন মল্লিকের সঙ্গে। তাদের সম্পর্ক এতোটাই গভীর হয়ে যায় যে, আরজিনার স্বামী জামিল শেখকে খুন ছাড়া কোনো পথ দেখছিলেন না তারা।

এজন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতে দরজা খোলা রেখে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন আরজিনা। গভীর রাতে প্রেমিক শাহীন ঘরে প্রবেশ করে লাঠি দিয়ে জামিলের মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

এ সময় শিশু সন্তান নুসরাত বিষয়টি দেখে ফেলায় তাকেও মা আরজিনার সামনেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন শাহীন।

বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) সকালে মধ্যবাড্ডার হোসেন মার্কেটের পেছনে ময়নারবাগের একটি বাড়ির চিলেকোঠার বাসা থেকে গাড়িচালক জামিল শেখ (৩৮) ও তার নয় বছর বয়সী মেয়ে নুসরাতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর পরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরজিনা বেগমকে আটক করা হয়।

ওই রাতেই নিহত জামিলের ছোট ভাই শামীম শেখ বাদী হয়ে আরজিনা বেগম ও তার কথিত প্রেমিক শাহিন মল্লিকের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি মামলা (মামলা নম্বর-০৪) দায়ের করেন। পরে আরজিনাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যে মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে শুক্রবার সকালে পলাতক প্রেমিক শাহিনকে খুলনার বটিয়াঘাটা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বাড্ডা থানা পুলিশ।

আরজিনা এবং শাহীনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, জামিল শেখ আগের বাসায় ভাড়া থাকা অবস্থায় প্রতিবেশী শাহীনের সঙ্গে আরজিনার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে গতমাসে নতুন বাসায় ভাড়া নেওয়ার সময় আরজিনা কৌশলে শাহীনকে সাবলেট হিসেবে নেয়। তখন থেকে স্ত্রীসহ শাহীন আরজিনাদের সঙ্গেই বসবাস করে আসছিলেন।

গত ৬ মাস ধরে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আরজিনা শাহীনের সঙ্গে নতুনকরে ঘর বাঁধার স্বপ্নে বাধা ছিলেন একমাত্র জামিল। তখন জামিলকে খুন ছাড়া তার আর কোনো উপায় দেখছিলেন না।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে দরজা খোলা রেখে স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন আরজিনা। মধ্যরাতের কোনো এক সময় প্রেমিক শাহীন ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত জামিলকে শক্ত কাঠ দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। তখন জামিল বলে উঠেন, শাহীন তুই আমাকে মারছিস কেন? কোনো কথা না শুনে জামিলের মাথায় বার বার আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন শাহীন।

এ সময় তাদের বড় সন্তান মেয়ে নুসরাত ঘুম থেকে জেগে দেখে ফেলে। তাই পাষণ্ড মা আরজিনার সামনেই নুসরাতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন শাহীন।

তদন্তকারী ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এ বিষয়ে শাহীনের স্ত্রী কিছুই জানতো না। শুক্রবার ভোরে শাহীন তার স্ত্রীকে বলেন, এ বাসায় খুন হয়েছে, চল আমরা চলে যাই। ভোরেই স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যান শাহীন।

ঘটনার বর্ণনায় জামিলের গ্রামের প্রতিবেশী ও ময়নারবাগের বাসিন্দা তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে সকালে জামিলের ঘরে প্রবেশ করে দেখি খাটের উপর জামিলের মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে এবং নুসরাতের মুখের উপর একটি বালিশ রাখা। জামিলের স্ত্রী আরজিনা রুমের বাইরে ছাদের এক কোনায় বসে নিচুস্বরে কাঁদছিলেন। তার শরীরে রক্ত এবং হাতে আঁচড়ের দাগ ছিল।

ঘটনা সম্পর্কে আরজিনার সন্দেহমূলক বক্তব্যের কারণে তখনই তাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বাড্ডা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আশরাফুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, মামলার দুই আসামিকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে। শনিবার তাদের আদালতে হাজির করা হবে। আশা করছি তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৭
পিএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।