টাকা দেওয়ার পরেই সেই চাকরি প্রার্থীর বাস্তবতা পাল্টে যায়। তার মতো অন্য কাউকে উদ্বুদ্ধ করে অর্থ হাতিয়ে নিতে পারলেই মিলে কমিশন।
শনিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করার কথা জানায় র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)।
আটকরা হলেন- শাহানুর মিয়া (৫১), গোলাম কিবরিয়া (৩৮), রফিকুল ইসলাম (২৪), সিদ্দিকুর রহমান (৩৯), নজরুল ইসলাম (২৭) ও হায়দার কবির মিথুন (৪৬)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১২ টি মোবাইল, ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯০ টাকা, ২৩টি রেজিস্টার ও ২০ টি অঙ্গিকারনামা উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, লাইফওয়ে নামক কোম্পানিটির রেজিস্ট্রেশন না থাকলেও এই প্রতিষ্ঠনটি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত বলে প্রচার করতো। চক্রের অধিকাংশ সদস্যই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অবসারপ্রাপ্ত কর্মচারি। তারা গ্রাম থেকে বেকার যুবকদের ভালো বেতন ও অন্যান্য সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে।
এরপর প্রথমেই চাকরিপ্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেয় এবং চাকরি নিশ্চয়তার কথা বলে জামানত হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। ফাঁদে পড়ে টাকা দিলেই বিভিন্ন অফিসিয়াল কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার ফাঁকে একটি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। এরপর ১৫-৩০ দিন প্রশিক্ষণের নামে আসলে শেখানো হয় প্রতারণার কৌশল।
তখন ভুক্তভোগীরা বুঝে যান, এটি চাকরি নয়। আরও লোককে ফাঁদে ফেলে নিয়ে আসতে পারলেই মিলবে কমিশন। কেউ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে জামানতের টাকা ফেরত না দিয়ে একটি টেলিভিশন এবং একটি ডিনারসেট দিয়ে বিদায় করা হয়। যেগুলোর দাম সর্বোচ্চ ১৫-১৮ হাজার টাকা।
কেউ প্রতিবাদ করলে যোগদানের সময় খালি স্ট্যাম্পে সাইনের কথা বলে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখানো হয়। এছাড়া, কোম্পানির লোকজন নিজেদের সামরিক বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে হুমকি দিতে থাকে। কেউ কেউ সবকিছু মেনে নিয়ে চাকরির স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে যান, আবার কেউ লোভে পড়ে হয়ে ওঠেন প্রতারক চক্রের সক্রিয় একজন।
র্যাব-১ এর স্কোয়াড কমান্ডার (সিপিসি-২) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সালাউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, লাইফওয়ে নামের নিষিদ্ধ এই বহুজাতিক কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। চাকরির আশায় গ্রামের অনেক যুবক শেষ সম্বল বিক্রি করে কিংবা সুদে টাকা এনে জামানতের টাকা দিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আটক ছয় জনের সবাই চাকরির জন্য এসে নিজেরাই প্রতারক চক্রের সদস্য হয়ে উঠেছেন। এ চক্রের মূলহোতাসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এএসপি সালাউদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৯
পিএম/এসআইএস