করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে সৃষ্ট লকডাউন এবং সরকার ঘোষিত দীর্ঘ ছুটির কারণে গত কয়েক মাস ধরে বেতনভাতা পাচ্ছেন না ফেনীর প্রাইভেট কলেজ ও নন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক-কর্মচারীরা। জেলার ১২টি প্রাইভেট কলেজের আড়াই শতাধিক প্রভাষক-কর্মচারী এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
মো. সাহেদ (ছদ্মনাম) ছিলেন গরিব ঘরের মেধাবী সন্তান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ ডিগ্রী। সরকারি চাকরি খুঁজতে খুঁজতে বয়স পার। বর্তমানে জেলার এশিয়ান কলেজে শিক্ষকতা করছেন তিনি। কোনোভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্ত গত দুই মাস প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নেই। ওই বেতনের উপরই নির্ভর করে জীবন চালান তিনি।
বীকন মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস.এম মাছুম বিল্লাহ জানান, শিক্ষার্থীদের মাসিক টিউশন ফি’র টাকা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়। কিন্ত মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষক-কর্মচারীরা গত মার্চ, এপ্রিল মাসের বেতন পাননি। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ফেব্রুয়ারি মাসেরও বেতন পাননি। সামনে আর কত দিন এভাবে চলবে বলা যাচ্ছে না।
শিক্ষকরা চলবে কিভাবে? প্রশ্ন রাখেন তিনি। ফেনী ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন জানান, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠানের ভবন ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
জেলার সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রাইভেট কলেজের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মার্চ মাসে মালিক অর্ধেক বেতন দিয়েছে। এখনও এপ্রিল বাকি। পরিবার নিয়ে কত কষ্টে আছি বুঝাতে পারবো না।
বীকন মডেল কলেজের প্রভাষক আবুল খায়ের জানান, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে সামান্য বেতনে শহরের একটি বাসায় ভাড়া থাকি। শিক্ষকতা আর টিউশনিতে চলতো সংসার। এখন প্রতিষ্ঠানের বেতন এবং টিউশনি সবই বন্ধ। বাসা ভাড়া, সংসার খরচ কিছু নেই। আমাদের কথা কেউ ভাবে না।
ফেনী টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মমিনুল হক জানান, স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন ফি বন্ধ। প্রতিষ্ঠানগুলো গত দুই-তিন মাস ধরে শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না। শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্বচ্ছল অভিভাবকদেরকে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
ফেনী জেলা নন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ফেডারেশন সূত্র জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো যে দিনই খোলা হোক না কেন, একদিনও না পড়ে শিক্ষার্থীরা বেতনভাতা পরিশোধ করবে না। আবার স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গেই যে সবাই বেতন পরিশোধ করবে ব্যাপারটা তা-ও নয়। কারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বিভিন্ন পেশাজীবী। তারাও এখন বেকার রয়েছেন। কমপক্ষে আগামী ছয় মাস শিক্ষক সমাজ চরম অভাবে থাকবে।
ফেনী সিটি কলেজের পরিচালক (প্রশাসন) মাঈন উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনের জন্য সরকার সহযোগীতা করলে, প্রাইভেট কলেজগুলো কেন বঞ্চিত হবে। প্রাইভেট কলেজগুলোর রেজাল্ট বরাবরই ভালো। আশা করি, করোনার দুঃসময়ে প্রাইভেট কলেজগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকার সহযোগীতার হাত বাড়াবে।
দরবেশেরহাট পাবলিক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও ফেনী জর্জ কোর্টের অ্যাডভোকেট এম. শাহজাহান সাজু বলেন, ফলাফলের উপর ভিত্তি করে প্রাইভেট কলেজগুলোকে দ্রুত এমপিওভুক্ত করা হোক। বর্তমানে স্কুল কলেজ বন্ধ রয়েছে ফলে শিক্ষার্থীদের থেকে বেতন সংগ্রহ করা যাচ্ছে না, শিক্ষকরা সীমাহীন কষ্টে আছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, প্রাইভেট কলেজগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য।
শিক্ষকদের এমন দুঃসময়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্যাহ জানান, প্রাইভেট কলেজগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবেতর জীবন যাপনের বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
এসএইচডি/ইউবি