ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সন্তান‌দের অব‌হেলায় শয‌্যাশা‌য়ী মা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২১
সন্তান‌দের অব‌হেলায় শয‌্যাশা‌য়ী মা

বরিশাল: চি‌কিৎসার অভা‌বে শয‌্যাশা‌য়ী ৭৫ বয়সী এক বৃদ্ধা দুই সন্তা‌নের বিরু‌দ্ধে মামলা দা‌য়ের ক‌রে‌ছেন। ওই বৃদ্ধা নি‌জে আদাল‌তে উপ‌স্থিত হ‌য়ে মামলা কর‌তে না পারায় বিচারক নি‌জে বৃদ্ধার বাসায় গি‌য়ে মামলা গ্রহণ ক‌রে‌ছেন।

 

বৃহস্প‌তিবার বিকাল সা‌ড়ে ৪টায় ব‌রিশালের অতিরিক্তক্ত চীফ মে‌ট্রোপ‌লিটন ম‌্যা‌জি‌স্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ মামলা‌টি গ্রহণ ক‌রে অভিযুক্তদের বিরু‌দ্ধে সমন জা‌রি ক‌রে‌ছেন। মামলায় বরিশাল নগরীর বৈদ্যপাড়ার জোড়াপুকুর এলাকার জাহানুর বেগম তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেয়ে সাবিনা আক্তারকে বিবাদী করেছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, খুলনায় আমি স্বামীর ঘরে থাকতাম। আমার চিকিৎসার খরচের জন্য আমি খুলনার সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেই। ক্রেতা বরিশালে এলে তাদের সঙ্গে কথাও বলি। ২২ অক্টোবর আসামিরা বরিশাল এসে সম্পত্তি বিক্রি করতে দেবেন না বলে জানায় এবং আমি অসুস্থ, ভরণ পোষণ দরকার বললেও তারা আমার ভরণ পোষণ দিতে পারবে না বলে জানায়। কোনো টাকা পয়সাও দিতে পারবে না এ কথা স্পষ্ট বলে। এরপর আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তারা চলে যায় ও এখন পর্যন্ত কোনো খোজ নেয়নি। আমার স্বামী ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বরে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে আমি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই। সর্বশেষ ব্রেইন স্ট্রোক, মেরুদণ্ড অচল এবং পিঠে ক্ষত ও প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হই। মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও ভরণ পোষনের আবেদন করা হয়।

বরিশাল সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ জানান, জাহানুর বেগম পিতা মাতার ভরণ পোষণ আইন ২০১৩ এর ৫ ধারা মোতাবেক মোস্তাফিজুর রহমান ও সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে ওকালতনামাসহ নালিশি দরখাস্ত বাহক মারফত আদালতে প্রেরণ করেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী ও নালিশী দরখাস্তের বাহককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিচারক জানতে পারেন বাদী শয্যাশায়ি, যার কারণে তিনি আদালতে আসতে পারেননি। এই অবস্থায় প্রকাশ্যে বাদীকে পরীক্ষা করা যায়নি। তবে এজলাসের কার্যক্রম শেষে আমাকে সঙ্গে নিয়ে বিচারক নালিশী দরখাস্তের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বাদীর বাসায় যান। বাদী বৃদ্ধার আইনজীবী ও আমার উপস্থিতিতে বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারক।

বাদীর অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয়। বিচারক মাসুম বিল্লাহ সমন জারির পাশাপাশি আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে আসামিদের আদালতে স্ব শরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন। জাহানুর বেগম বর্তমানে তার ছোট মেয়ে সাহিদার সঙ্গে বসবাস করছেন।

এদিকে এই জাতীয় পদক্ষেপ মানুষের দোরগোড়ায় বিচার পৌছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যুগান্তকারি পদক্ষেপ বলে মনে করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী ফজলুল হক বিশ্বাস।
 
বাংলাদেশ সময়: ২৩১২ ঘণ্টা, অ‌ক্টোবর ২৮, ২০২১
এমএস/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।