লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের বাড়িতে আবারও আগুন দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ লোকজন বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্র ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পাঁচতলা বিশিষ্ট ওই বাড়িটিতে কেউ বসবাস করছিল না। আওয়ামী লীগের সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট বাড়িটিতে প্রথম আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ৫ আগস্টও ওই বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভাঙা বাড়িতে পুনরায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ওই বাড়ি থেকেই পরিচালিত হতো।
আওয়ামী লীগ নেতা নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন ৫ আগস্টের ঘটনার পর থেকে পলাতক। তিনি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি। লক্ষ্মীপুর-২ (সদরের একাংশ-রায়পুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।
এদিকে আগুন দেওয়ার পর কয়েকজন যুবক বাড়ির কিছু মালামাল লুটে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে স্থানীয় এক সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তারা।
স্থানীয় সংবাদকর্মী ফরহাদ হোসেন বলেন, আগুন দেওয়ার পর একটি পিকআপ ভ্যানে করে কয়েকজন যুবক কিছু মালামাল লুট করছিল। তখন আমি ভিডিও ধারণ করতে গেলে তারা আমাকে গালমন্দ করে। পরে ছবি তুলতে গেলে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে এক যুবক আমাকে মারধর করার জন্য তেড়ে আসে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন ধরে কয়েকজন শ্রমিক এখানে সংস্কার কাজ করছিলেন।
সংস্কার কাজে নিয়োজিত নির্মাণ শ্রমিক আবদুল মাজেদ বলেন, আমরা সংস্কার কাজ করছিলাম। বিকেলের দিকে কয়েকজন যুবক এসে কাজ বন্ধ করতে বলে। পরে তারা একটি দেয়াল ভেঙে ফেলে এবং আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন যুবক নিজেদেরকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দিয়ে বলেন, লক্ষ্মীপুরে গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের হত্যার বিচার হয়নি। কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশ আসামি এখনো বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আহতরা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, শহীদ পরিবারের কান্না থামেনি। অথচ হত্যাকারী নয়নের বাড়ি সংস্কার করা হচ্ছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সাবেক মুখ্য সংগঠক সাইফুল ইসলাম মুরাদ গণমাধ্যমকে বলেন, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক অবৈধ এমপি ও ছাত্র হত্যা মামলার আসামি সন্ত্রাসী নয়নের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে সংস্কার কাজ চলছিল। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করে এবং বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
তিনি আরও জানান, জুলাই যোদ্ধারা ঘটনাস্থল ত্যাগের পর খুনি নয়নের বাড়ির মালামাল লুটের বিষয়ে শুনেছি। তবে লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের কেউ আমাদের সহযোদ্ধা নয়। সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। পরে ডেকে এনে সাংবাদিকের সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার সাইফুল ইসলাম রাজু বলেন, সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা আগুন নিভিয়েছি।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মোন্নাফ সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িটি গত ৪ আগস্ট পোড়ানো হয়েছিল। তাতে বাড়ির অবকাঠামো ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আবারও সেখানে আগুন ধরানো হয়েছে বলে জেনেছি।
এমজে