ময়মনসিংহের তারাকান্দায় জোর করে বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দ ফকিরের (৭০) চুল-দাড়ি কাটার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সুজন মিয়া (৩০) নামে আরও এক আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এনিয়ে গত দুদিনে দুই আসামি গ্রেপ্তার হলেন।
বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেল ৩টা সংশ্লিষ্ট মামলায় আসামিদের ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। এ সময় আদালতে আসামিদের নামে এ রিমান্ড আবেদন করা হয়।
পৃথক পৃথক অভিযানে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ও রাতে ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রথমে আসামি মজনু মিয়া (৪৭) ও পরে সুজন মিয়াকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দুজনেই উপজেলার কাশিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টিপু সুলতান খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় গত শনিবার তারাকান্দা থানায় ভুক্তভোগীর ছেলে মো. শহীদ আকন্দ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন আকন্দ অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন তিনি বাজারে গেলে কয়েকজন তাকে জোর করে ধরে চুল ও দাড়ি কেটে দেন। তখন বাজারে লোকজন কম ছিল। চেষ্টা করেও তিনি তাদের হাত থেকে রেহাই পাননি।
তিনি বলেন, তখন আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি, এখনও আল্লাহর কাছেই বিচার চাই। তবে পরিবারের কথায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি, দেখি কী বিচার হয়।
তিনি আরও জানান, তার চুল-দাড়ি কাটার সময় বাইরের দুজনসহ আট-নয়জন ছিলেন। তাদের মধ্যে এলাকার নয়ন ও মজনুও ছিলেন। আমি তাদের বিচার চাই।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হালিম উদ্দিনের বাড়ি তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামটি ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের পাশে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে হালিম ফকির হিসেবেই চেনেন। একেবারেই গরিব একজন মানুষ। হালিম উদ্দিন কোনো অপ্রকৃতিস্থ বা পাগল ব্যক্তি না। তিনি হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ্ পরানের (র.) ভক্ত। প্রায় ৩৭ বছর আগে উনাদের মাজারে যাওয়ার পর থেকেই তিনি বেশভূষাকে বদলে যান। সেই থেকে তিনি চুল দাড়ি কাটা বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে তিনি এলাকায় টুকটাক কবিরাজী করতেন। নিজের মতো চলতেন। তাকে নিয়ে পরিবার বা এলাকাবাসীরও কোনো অভিযোগ ছিল না।
স্থানীয়রা আরও জানান, হেনস্থার পর চুল-দাড়ি কেটে দেওয়ার পরই বিষন্নতা ভর করে তার জীবনে। সেই বিষন্নতা এখনও কাটেনি। কারো সাথে সেদিনের ঘটনা নিয়ে কথা বললে, কখনও আবেগ, কখনও রাগ আবারও কখনো ক্ষোভ ঝড়ে পরে তার কণ্ঠে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেনস্থা করে হালিম উদ্দিনের চুল কাটার ঘটনার পর নিন্দার ঝড় বইছে। বিশেষ করে হেনস্থা করে চুল কাটার সময় অসহায়ের মতো তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ, তুই দেহিস’। তার এ বাক্যটিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে।
প্রতিবেশিরা জানান, হালিম উদ্দিন পাগল বা মানসিক রোগী নন। সংসার জীবনে তিনি পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক। দীর্ঘ ৩৭ বছর যাবৎ জট ছিল তার মাথায়। এক সময় কৃষক ছিলেন। ধীরে ধীরে ফকিরি হালে চলে আসেন। টুকটাক কবিরাজিও করেন। এলাকায় স্বাভাবিক মানুষের মতোই তার আচরণ ও চলাফেরা। আছে হাট বাজারেও যাতায়াত। গত কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ করেই একদল লোক এসে তার মাথার জট, দাড়ি ও চুল জোর করে কেটে দেন। তখন হালিম উদ্দিন প্রাণপণ চেষ্টা করেন, তাদের আটকাতে। কিন্তু আগত ব্যক্তিদের শক্তির সঙ্গে তিনি আর পেরে উঠেননি।
** ‘আল্লাহ, তুই দেহিস’: জোর করে চুল-দাড়ি কেটে দেওয়ার ঘটনায় মামলা
** জোর করে বৃদ্ধের চুল-দাঁড়ি কেটে ফেলার মামলায় গ্রেপ্তার ১
এসআরএস