ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পেটে থাকতেই পিতার মৃত্যু, জন্মের সময় যমজ ভাই-মাকেও হারালো শিশুটি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৩
পেটে থাকতেই পিতার মৃত্যু, জন্মের সময় যমজ ভাই-মাকেও হারালো শিশুটি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: স্ত্রীর গর্ভে জমজ সন্তান রেখে ৪ মাসে আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্কুলশিক্ষক আবুল কালাম আজাদ (৪৯)। পরে তার স্ত্রী শরিফা খাতুন (৪৩) জন্ম দিলেন একটি ছেলে ও একটি মেয়ে।

তবে গর্ভে থাকা অবস্থায় ছেলে শিশুটির মৃত্যু হয়। জমজ সন্তান প্রসব করার পর মৃত সন্তান জন্মের খবর শুনে সদ্য জন্ম নেওয়া মেয়েকে রেখে হার্ট অ্যাটাকে পরপারে চলে যান গৃহবধূ শরিফা খাতুনও। এ সময় ক্লিনিকে থাকা দর্শনার্থীদের সবার মন্তব্য ছিল, ছোট্ট শিশুটির দেখার জন্য আল্লাহ ছাড়া আর কেউ থাকলো না।

মঙ্গলবার (১৬ মে) রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের হাসপাতাল রোডের সিটি ক্লিনিকে ঘটে এ ঘটনা।

নিহত শরিফা খাতুন সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর ছাবানিয়া গ্রামের মৃত আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী। বুধবার (১৭ মে) সকালে ছাবানিয়া গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৃত অবস্থায় জন্ম নোওয়া তার ছেলেকে দাফন করা হয়। তবে শরিফা খাতুনের বেঁচে যাওয়া মেয়ে শিশুটি সুস্থ আছে।

ক্লিনিক সূত্রে ও নিহত শরিফার স্বজনরা জানান, এ বছরের ৬ জানুয়ারি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আবুল কালাম আজাদের মৃত্যু হয়। তিনি সুন্দরপুর ইউনিয়নের বাগচর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। পরে গত মঙ্গলবার সন্তান সম্ভবা শরিফা খাতুনের আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে দেখা যায়, গর্ভে থাকা ছেলে সন্তানটি মৃত অবস্থায় আছে। তাই দ্রুত অপারেশন করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ওই দিনই সিটি ক্লিনিকে তার অপারেশন সম্পন্ন হয়। এ সময় তার মৃত ছেলে ও জীবিত মেয়ে জন্ম হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর মৃত সন্তান হওয়ার খবরে হার্ট অ্যাটাক করেন শরিফা। ওই দিনই রাত ১০টার দিকে ক্লিনিকে তারও মৃত্যু হয়।

নিহত শরিফা খাতুনের দেবর মুনজুর আলী বলেন, ৪ মাস আগে স্কুলে গিয়ে আমার বড় ভাই (আবুল কালাম) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পরে তার অবস্থায় উন্নতি না হলে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৬ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর চার মাস পরে একটি মেয়ে সন্তান রেখে ভাবিও দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। এখন শিশুটির আর কেউই থাকলো না।

নিহত আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম বলেন, এর আগেও ভাবির পেটে বাচ্চা মারা গেছে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় এমনকি দীর্ঘদিন ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ ভাবির মৃত্যুর তিনদিন আগেই গর্ভে থাকা একটি শিশু মারা যায়।

সিটি ক্লিনিকের ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে জমজ সন্তানের একজন মৃত থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে হার্ট অ্যাটাক করে ওই মায়ের মৃত্যু হয়েছে। পরে পরিবারের তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।