বরিশাল: কীর্তনখোলা নদীর অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বরিশাল নগরীর বেলতলার সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট।
১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ প্লান্ট উদ্বোধনের আগেই এমন বিপাকে পড়ায় হতাশ বরিশালবাসী।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটা থেকে ৩শ’ ফুট জায়গায় ভাঙন রোধে এ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী লুৎফুর রহমান।
তিনি জানান, কীর্তনখোলা নদীর ভাঙনের হাত থেকে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট রক্ষায় প্রাথমিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকার একটি ব্যয় খসরা আনা হয়েছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড আপাতত কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারায় এটি রক্ষায় স্থানীয়ভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ঠিকাদারদের দিয়ে ওই ব্যয় খসরা অনুসারে কাজটি করানো হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের বরিশাল অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রশিদুল হক বাংলানিউজকে জানান, গত পাঁচদিনের ভাঙনে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের নদী সংলগ্ন গাইড ওয়াল ভেঙে গেছে, প্লান্টের সীমানার ভেতরে থাকা বালুর স্তর ধুয়ে যাচ্ছে, মাটি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এ মুহৃর্তে এটি রক্ষার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
তারা পদক্ষেপ নিবেন, তবে আপতত চলমান ভাঙন রোধ করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বালুর বস্তা ফেলার কাজটি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরো বেশি এলাকাজুড়ে এ বস্তা ফেলা হতে পারে বলে জানান তিনি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক মো. রবিন রায়হান বলেন, বিশুদ্ধ পানি সাপ্লাই দেওয়া আমাদের কাজ। আর নদীর ভাঙন রোধ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাজ। তারপরও যেহেতু আমাদের এ প্রকল্পটি হুমকির মুখে তাই এটিকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব কিছু করা হবে।
তিনি বলেন, গত পাঁচদিনে নদীর ভাঙনে এ ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি দ্রুতগামী ভ্যাসেল এ নদীতে চলাচল করায় সে সময়ে প্রচণ্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়ে পাড়ে আঘাত হানছে। সে বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, তারা এটি রক্ষায় দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
নগরবাসীর বাকি পানির চাহিদা মেটাতে বরিশাল নগরীর বেলতলায় ২০১২ সালে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এবং নগরীর রুপাতলীতে ২০১৩ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এর কাজ শুরু করা হয়। এ প্লান্ট দু’টিই কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে অবস্থিত। এ প্লান্ট দু’টো চালু হলে এক কোটি ৬০ লাখ করে তিন কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিলেট ও বরিশাল মহানগরীতে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ প্রকল্পের আওতায় বরিশাল নগরীর বেলতলায় অবস্থিত সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটির কাজ ৯৫ ভাগ শেষ হয়ে গেছে এবং নগরীর রুপাতলীতে অবস্থিত সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটির ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ছিলো প্লান্ট থেকে নগরীর প্রায় সাতটির মতো রিজার্ভ ট্যাংকি পর্যন্ত (ট্রান্সমিশন পাইপলাইন) পাইপলাইন টানার কাজ। তাও শেষের পথে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার পাঁচ লাখ নগরবাসীর জন্য চার কোটি ৫০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। যার অনুকূলে সিটি কর্পোরেশন বর্তমানে উৎপাদন করতে পারছে দুই কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি। ধারণক্ষমতা না থাকায় বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে এক কোটি ৫৭ লাখ লিটার পানি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
আরএ