ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রায়ে সন্তুষ্ট রাজনের বাবা-মা

নাসির উদ্দিন ও আব্দুল্লাহ আল নোমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫
রায়ে সন্তুষ্ট রাজনের বাবা-মা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট আদালত পাড়া থেকে: আলোচিত শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় প্রধান আসামি কামরুলসহ চারজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার (৮ নভেম্বর) রায় ঘোষণার পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত রাজনের বাবা শেখ আজিজুল ইসলাম আলম ও মা লুবনা বেগম।



এছাড়া রায়ে একজনকে যাবজ্জীবন, তিন জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও দু’জনকে এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। খালাস দেওয়া হয়েছে তিন জনকে।

রায় প্রকাশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাজনের বাবা বলেন, রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি সন্তুষ্ট। এ সময় দ্রুততার সঙ্গে রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি।

রাজনের মা লুবনা বেগম বলেন, ছেলে হত্যার ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছিলাম। রায়ে আসামিদের ফাঁসি হওয়ায় আমি খুশি হয়েছি। এখন দ্রুত ফাঁসি কার্যকর ও পলাতক আসামিকে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।

রোববার বেলা বারোটা ৪০ মিনিটে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মামলার ১৩ আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন- মহানগরীর জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম (২৪), চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫), তাজউদ্দিন বাদল (২৮) ও জাকির হোসেন পাভেল।

এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ময়না চৌকিদারকে অপর দু’টি ধারায় পৃথকভাবে সাত বছর ও এক বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত।

মামলার অপর আসামি হত্যাকাণ্ডের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর মিয়ার যাবজ্জীবন প্রদান করেন আদালত। সাত বছরের সাজা হয়েছে মুহিত আলম, আলী হায়দার, পলাতক আসামি শামীম আহমদের।

এছাড়া অপর দুই আসামি আয়াজ আলী ও দুলালকে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় বেকসুর খালাস পান ফিরোজ মিয়া, আজমত আলী, রুহুল আমিন।

দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে দশ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৩ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত।

বিচার শুরুর পর ১৬ কার্যদিবসের মধ্যে রোববার (০৮ নভেম্বর) এ মামলার রায় ঘোষণা হয়।

গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় সদর উপজেলার কান্দিরগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের শেখ আজিজুল ইসলাম আলমের ছেলে রাজনকে।

নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পর মরদেহ গুম করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হন কামরুলের ভাই মুহিত আলম। হত্যাকারীরা নির্যাতনের ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। খুনিদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন জনতা।

রাজন হত্যাকাণ্ডের পর মহানগরীর জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মুহিত আলমসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গিয়ে হত্যাকারীদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার অভিযোগে বরখাস্ত হন জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন, এসআই জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।

গত ১৬ আগস্ট সৌদি আরবে আটক কামরুল ইসলামসহ ১৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর সুরঞ্জিত তালুকদার।

৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক সাহেদুল করিম।

১৬ সেপ্টেম্বর এ আদালতে মামলার প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২২ সেপ্টেম্বর আদালতের বিচারক চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় সৌদি আরবে আটক কামরুলসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন।

এরপর ০১ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ কার্যদিবসে মোট ৩৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। কামরুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ অক্টোবর ১১ জন সাক্ষী ফের সাক্ষ্য দেন তার উপস্থিতিতে। ২৫ অক্টোবর এ মামলায় ৩৪২ ধারায় আসামিদের মতামত গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শুরু হয়।

২৭ অক্টোবর তিন কার্যদিবসে মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিদের উপস্থিতিতে ০৮ নভেম্বর রায়ের দিন নির্ধারণ করেন আদালতের বিচারক।

এদিকে নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের পর মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়েও রক্ষা পাননি। প্রবাসীরা তাকে ধরে বাংলাদেশ দূতাবাসে হন্তান্তর করেন। পুলিশ সৌদি আরবে গিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গত ১৫ অক্টোবর তাকে দেশে নিয়ে আসে।

‍আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার কামরুল, তাজউদ্দিন বাদল ও রুহুল আমিন ছাড়া অন্য ৮ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৫/আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা
এনইউ/এএএন/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।