ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

কঙ্গোর শান্তি রাখবেন বাংলার ৯ নারী সেনা

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫
কঙ্গোর শান্তি রাখবেন বাংলার ৯ নারী সেনা ছবি: কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা সেনানিবাস থেকে: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কঙ্গো যাচ্ছেন বিমান বাহিনীর ৩৫৮ সদস্য। এ দলে রয়েছেন ৯ নারী সেনা।

যারা চরম প্রতিকূলতায় মানিয়ে নেওয়ার প্রশিক্ষণে যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন এবং মুগ্ধও করেছেন সবাইকে।
 
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে সদস্যরা জানান, দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও সম্মানিত করাই তাদের উদ্দেশ্য। পুরুষ সদস্যদের চেয়ে কোনো অংশে তারা কম নন, বরং তারা দক্ষতার জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছেন পুরুষ সহকর্মীদেরও।
 
নারী সেনাদের মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার রয়েছেন চারজন। তারা হলেন- মনজিলা, রুমানা, সাইফা, মৌলি। আর নওরীন, মধুরিমা, ফারিহা, হীরা ও হামিদা নামে এই পাঁচজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট।

রোববার (০৮ নভেম্বর) সকালে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের (ঢাকা সেনানিবাস) এমআই-১৭ হ্যাঙ্গারে একটি অনুষ্ঠানে তাদের দিক নির্দেশনা দেন বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার।

অনুষ্ঠান শেষে তার সঙ্গে আলাপে জানা যায়, নারী সেনাদের প্রস্তুতি ও গর্বের কথা।
 
বিমান বাহিনী কর্মকর্তারা জানান, এ সদস্যরা মিশনে থাকবেন আগামী এক বছর। কঙ্গোগামী ব্যানএয়ার সদস্যদের নিয়ে প্রথম ফ্লাইটটি আগামী ১৩ নভেম্বর ভোরে যাত্রা করবে। এরপর ৩১ নভেম্বর পর্যন্ত সাতটি ফ্লাইটে সেখানে যাবেন তারা।

কঙ্গো মিশনে এটি দ্বিতীয় যাত্রা বলে বাংলানিউজকে জানান স্কোয়াড্রন লিডার মনজিলা।  
 
তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা থাকায় সহযাত্রীদের সহযোগিতা করতে পারবো। সেখানে খুব শুষ্ক আবহাওয়া, পাহাড়ের বেশ উপরে কাজ করতে হয় বলে প্রথমদিকে একটু কষ্ট হতে পারে। কিন্তু ধীরে ধীরে সয়ে যায়। এছাড়া পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ রয়েছে আমাদের সবার।

এ সদস্যরা সব সময় নিজেদের ‘নারী’ নয়, ‘মানুষ’ ভাবেন। তারা জানান, সুশৃঙ্খল এ বাহিনীতে দক্ষতার ভিত্তিতে সঠিক মূল্যায়ণ ও সম্মান পেয়েছেন। বিদেশের মাটিতে দেশের সম্মান আরও বাড়াতে ভূমিকা রাখার সুযোগ পেয়ে তারা গর্বিত।
 
আরেক স্কোয়াড্রন লিডার রুমানা বলেন, সামরিক বাহিনীর সব সদস্যই যে কোনো পরিবেশে মানিয়ে চলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাই যে কোনো সমস্যাই আমরা মোকাবেলা করতে পারি। এর আগে তাই দেখা গেছে।

তিনি বলেন, নারী বলে কোনো সহকর্মী আমাদের দুর্বল ভাবেন না। কিংবা শারীরিক শক্তি কম ভেবে করুণা দেখান না। প্রাপ্য সম্মানই টিম মেটদের (সহকর্মী) কাছে পাই, এটা খুবই স্বস্তির।
 
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নওরীন আরও বড় স্বপ্ন দেখেন। তিনি একজন আবহাওয়াবিদ। তার দেওয়া তথ্য পুরো মিশনে সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করবে। এমন গুরু দায়িত্ব নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু কোনো চাপ বোধ করছেন না বলেও জানান তিনি।
 
নওরীন বলেন, ‘এক সময় সবাই ভাবতো, নারী শরীর কঠোর পরিশ্রমের উপযোগী নয়। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাহিনীতে শুরুতেই টানা দুই বছর আমাদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রমাণিত হয়েছে, সঠিক প্রশিক্ষণ ও লাইফস্টাইলে নারী-পুরুষ সমান শারীরিক দক্ষতা দেখাতে পারে। মেয়েরা অনেক দায়িত্বশীল, অনুগত ও ধৈর্য্যশীল বলে প্রশংসা করেন আমাদের সিনিয়ররা। ’
 
‘আরও মেয়ে বাহিনীতে যোগ দিক, এটাই পরামর্শ থাকবে। আমি স্বপ্ন দেখি, খুব শিগগিরই নারী পাইলটরাও এমন মিশনে যাবেন’- বলেন তিনি।

নয়জনের মধ্যে অনিবার্য কারণে হীরা ও হামিদা এই দুইজন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেননি। বাকি সাত নারী সেনা তাদের পক্ষেও জানিয়ে দেন, পরিবারের বাধা নয়, বরং উৎসাহ নিয়ে দেশ ছাড়ছেন তারা সবাই। যে কোনো সদস্যের অবর্তমানে স্বজনদের দেখভাল করবে বাহিনী। তাই তারা নিশ্চিন্তে পেশার দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

অনুষ্ঠানের ভাষণে তেমন আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতিও দিলেন বাহিনী প্রধান।
 
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে একই নির্দেশনা দিয়ে আবু এসহার বললেন, ‘তোমরা কেউ আলাদা নও, সবাই মিলেই একটি দল। নিজেদের মধ্যে সহমর্মিতা ও সহযোগিতা রাখবে। নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ মেনে চলবে। সিনিয়রদের মেনে চলবে। পোশাকের সম্মান রাখবে। এটাই শৃঙ্খলা। তোমরা সবাই পেশাদার সোলজার। এ মিশন যেন আমাদের ইউনিটকে আরও সম্মান এনে দেয়। ’

এ মিশনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তিনটি কন্টিনজেন্টের (ইউটিলিটি এভিয়েশন ইউনিট, এয়ারফিল্ড সার্ভিসেস ইউনিট ও এয়ার ট্রান্সপোর্ট ইউনিট) সদস্যরা রয়েছেন। এছাড়া একটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান, ছয়টি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার ও বিভিন্ন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৫
এসকেএস/টিআই

** ‘মিশনে গিয়ে ফেসবুকে নেগেটিভ মন্তব্য নয়’
** শান্তি মিশনে কঙ্গো যাচ্ছেন বিমান বাহিনীর ৩৫৮ সদস্য

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।