ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

চারদিনেও কিনারা হয়নি, আতংকে নুর আলম

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫
চারদিনেও কিনারা হয়নি, আতংকে নুর আলম ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: নুর আলম সিদ্দিকের চোখে মুখে এখনো ভয় আর আতংক। সেটা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার চাহনিতে।



কথা বলার মুহূর্তে চোখ আপনা-আপনিই ঘুরে যাচ্ছিলো চারদিকে। যদিও তার কেবিন ঘিরে তখনো ডজন খানেক সশস্ত্র পুলিশ।

নুর আলম সিদ্দিককে দেখতে রোববার দুপুরে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজি) আব্দুস সালাম। তার আগেই কথা হয় নুর আলম সিদ্দিকের সঙ্গে।

আগের চেয়ে শারীরিক অবস্থার বেশ উন্নতি। চিকি‍ৎসকদের অক্লান্ত চেষ্টা আর কপালের জোরে বেঁচে গেছে বাম হাতটি।

ব্যান্ডেজ প্যাঁচানো হাতের আঙ্গুলগুলো নড়াচড়া করায় ডাক্তাতরা খুশি তাদের সাফল্য নিয়ে।

অর্থপেডিক্স ইউনিটের চিকিৎসক ডা. আসাদুল্লাহ রিপন বাংলানিউজকে জানান, হাতের গুরুত্বপূর্ণ নার্ভগুলো কেটে গিয়েছিলো। সেগুলো লেজার সার্জারির মাধ্যমে মেরামত করা হয়েছে। বিলম্ব হলে হাতটিই কেটে ফেলতে হতো।

তবে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরা নুর আলম সিদ্দিকের কাছে এই খবরের খুব একটা দাম নেই। নেই কোন উচ্ছ্বাস বা আনন্দ। বরং ভিন্ন এক আতংক তাড়া করছে তাকে।

দরজায় টোকা পড়লে বা অচেনা কেউ প্রবেশ করলেই গা শিউরে ওঠে তার।

এরই মাঝে নূর আলম সিদ্দিকের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।

‘আমি আগের চেয়ে ভালো। খেতে পারছি। ব্যথাটাও কম’। জানান নুর আলম সিদ্দিক।

কি হয়েছিলো সেই মুহূর্তে?

প্রশ্নটাতেই যেন চুপসে যায় নুর আলম সিদ্দিকের মুখ।

পুনরায় জিজ্ঞাসার জবাবে জানান, আমরা স্যারের জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। তিনি আসার আগ মুহূর্তেই অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।

মূলত সে সময় শিল্প পুলিশের এই টিমের নিরাপত্তা তল্লাশী চৌকির নেতৃত্ব দেবার কথা ছিলো আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক হাবিবুর রহমানের। তার দায়িত্ব ছিলো আটটায় সেই পোস্ট বুঝে নেয়া। তবে তার উপস্থিতির ১৫ মিনিট আগেই হামলাকারীরা হানা দিয়ে পালিয়ে যায় নির্বিঘ্নে। যদিও এ ঘটনার পর পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় উপ-পরিদর্শক হাবিবুর রহমানকে।

আশুলিয়ার তল্লাশী চৌকিতে ওই অতর্কিত হামলার ঘটনায় চার দিন পেরিয়ে গেলেও জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

ঘটনাস্থল ও আশপাশে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী, হোটেল মালিক, বরখাস্ত তিন পুলিশ সদস্যসহ ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও মেলেনি কোন ক্লু।

কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনো অজানা তদন্তকারীদের।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, মূলত জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েই চলছে তদন্ত কার্যক্রম।

তদন্তের অংশ হিসেবে আশপাশের পোশাক কারখানার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের পাশাপাশি এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাড়াটেদের তথ্য সংগ্রহ করেও জড়িতদের সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোন স্পষ্ট ধারণা পায়নি পুলিশ।

তদন্তকারীরা বলছেন, মূলত অসর্তকতা আর দায়িত্বের পালা বদলের মুহূর্তটাকেই কাজে লাগিয়েছে হামলাকারীরা।

প্রসঙ্গত: গত বুধবার নন্দন পার্কের সামনে পুলিশের চৌকিতে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে শিল্প পুলিশ-১-এর কনস্টেবল মুকুল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আহত করা হয় নুর আলম সিদ্দিক নামের আরেক কনস্টেবলকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।