‘ঘুষ ছাড়া চাকরি নিয়েছেন এমন কাউকে পাওয়া গেলে তাকে সংবর্ধনা দেবেন’-নিজ দলের জনসভায় সেলিমের এ বক্তব্যের জবাবে বাংলানিউজের কাছে নিজ থেকেই এ প্রতিক্রিয়া জানান পুলিশের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা শাহ মিজান শাফিউর রহমান।
রাজনীতিবিদ হিসেবে তার এ বক্তব্য মাঠের ‘ফাঁকাবুলি’ না হয়ে বরং সত্যিকারের নেতা হিসেবে সেলিম নিজের দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখবেন- এমনটিই বিশ্বাস তার।
গত দুই বছরে কেবলমাত্র ঢাকা জেলাতেই পুলিশ কনস্টেবল পদে কোনো ঘুষ ছাড়া প্রায় এক হাজার যুবকের চাকরি হয়েছে, এমন দাবি করে ঢাকাতেই তাদের সংবর্ধনা দিতে সেলিমের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেবার আহ্বান এই পুলিশ সুপারের।
‘আমি দায়িত্বের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলছি, ঘুষতো দূরের কথা, ঢাকা জেলায় পুলিশ সদস্য নিয়োগে কোনো তদবিরের কাছেও মাথানত করা হয়নি। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই যোগ্যতার মাপকাঠিতেই নিয়োগ পেয়েছেন। ’
অথচ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম নাকি এমন কাউকে খুঁজে পাননা!
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে নয়, নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকেই আমি তাকে এ বিষয়ে খোঁজ দিলাম। তিনি নিজেও অনুসন্ধান করে এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।
দূরে কোথাও না পেলে অন্তত হাতের কাছে নিয়োগ পাওয়া এমন ব্যক্তিদের নিয়েই সংবর্ধনা আয়োজনের সূচনা হোক এমন প্রত্যাশা শাহ মিজান শাফিউর রহমানের।
‘আমি নিজেও মেধা ও যোগ্যতার নিরিখে চাকরি পেয়েছি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। কাউকে ঘুষ দিতে হয়নি। ’
পত্রিকায় পড়লাম, তিনি বলেছেন বড় অফিসার থেকে শুরু করে পিয়নের চাকরি হোক, ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছে এমন কেউ নেই। তার এ বক্তব্য যে পুরোপুরি সঠিক নয়। সেটার প্রমাণ দিয়েই তাকে আহ্বান জানাচ্ছি নিজের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবার তিনি সংবর্ধনা দেবেন এবং পুলিশ কনস্টেবল থেকেই তার সূচনা হবে।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে যুব ইউনিয়নের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘এখন বাংলাদেশে চাকরির জন্য প্রত্যেককেই ঘুষ দিতে হয়- এমন মন্তব্য করে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ঘুষ ছাড়া চাকরি নিয়েছেন এমন কাউকে পাওয়া গেলে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
‘এমএ পাস, বিএ পাস, মেট্রিক পাস কিংবা শিক্ষাবঞ্চিত সাধারণ নাগরিক হোক, বড় অফিসার থেকে শুরু করে পিয়নের চাকরি হোক, ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছে- এ রকম লোকের খোঁজ পেলে আমার কাছে নিয়ে আসবেন, আমি এই প্রেস ক্লাবের সামনে তার ছবি সাঁটিয়ে রেখে দেব, যাতে দেশের ১৬ কোটি মানুষ দেখতে পারে। ’
ঘুষ ছাড়া চাকরির দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার আগে এমন কথাই বলেন সেলিম। ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছেন এমন লোক এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেই নিজের বিশ্বাস আর অবস্থানের কথা জানান এই বাম নেতা। তার এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে নিজেদের মর্যাদা ও সম্মানহানী বোধের কথাই বাংলানিউজকে জানাচ্ছিলেন ঢাকার এসপি শাহ মিজান শাফিউর রহমান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, রাষ্ট্রের সবচেয়ে কাঙ্খিত বিসিএসের চাকরি কিংবা প্রথম শ্রেণীর যে কোনো পদে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগের নেপথ্যে ঘুষের সুযোগ নেই।
কর্মকর্তা হিসেবে সংবর্ধনা দিলে সেলিম সাহেবকে গত আট বছরে বিসিএসের নিয়োগ পাওয়া ২৬ হাজার ১৯৫ জন ক্যাডারকে এবং ৪৩ হাজার ২০ জন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাকে সংবর্ধনা দিতে হবে।
এ ছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এমন অসংখ্য কর্মকর্তাকে সংবর্ধনা দিতে হবে।
‘চাকরিতে ঘুষের এই ‘ন্যাক্কারজনক’ অবস্থা কেবল ‘পাকিস্তান আমলেই ছিলো। ঘুষ দেওয়া ছাড়া চাকরি পাওয়া যায় না। আবার ঘুষ দিলেও চাকরি পাওয়া যায় না। ঘুষের ভেতরে নাকি এখন দুর্নীতি ঢুকে গেছে, এ রকম একটা অবস্থার ভেতরে আজকে চলে গেছি’- সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের এই বক্তব্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমাকে হতাশ ও মর্মাহত করেছে যোগ করেন শাহ মিজান শাফিউর রহমান।
‘নিজের কথা না হয় বাদই দিলাম। ঘুষ, তদবির ছাড়া আমি শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে মেধা ও যোগ্যতার মাপকাঠি কেবল ঢাকাতেই গত দুই বছরে পুলিশ কনস্টেবল পদে হাজার খানেক মানুষের চাকরি নিশ্চিত করতে পেরেছি। বিবেকের তাড়নায় সেটা জানাতেই আমার এ অবস্থান। কারণ প্রবীণ রাজনীতিবিদদের এমন কথা শুনে আমাদের সন্তানরা যখন প্রশ্ন করেন তখন নিজের কাছে লজ্জিত হতে হয়। ’
ঘুষ দুর্নীতি যে নেই। আমি সেটা বলছি না। ‘ঘুষ ছাড়া চাকরি নিয়েছেন এমন কাউকে পাওয়া গেলে তাকে তিনি সংবর্ধনা দেবেন’-এমন বক্তব্যেই আমার এ অবস্থান।
আমি এমন ব্যক্তিদের খোঁজ দিলাম। এখন কথা মতো সংবর্ধনা দেয়ার দায়িত্ব সিপিবি সভাপতির।
আমার মতো যেমন অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে যারা ঘুষ নয়, মেধা ও যোগ্যতার মাপেই চাকরি পেয়েছেন। আবার আমার মতো অনেককেই পাওয়া যাবে যারা ঘুষ বা তদবির ছাড়াই হাজার হাজার মানুষের চাকরির নিয়োগ নিশ্চিত করছেন।
এটা সিপিবি সভাপতিকে জানতে হবে। তিনি রাজনীতি করেন। অনেক কথাই বলতে পারেন। তবে ঢালাওভাবে সবকিছু বলা সমীচিন নয়- জানান শাহ মিজান শাফিউর রহমান।
যিনি ২০০১ সালে পুলিশে যোগদান করে দিনাজপুর জেলা, সিএমপি, র্যাব, এসবি ও যশোর জেলায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। দু'বার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘জাতিসংঘ শান্তি পদক’ প্রাপ্তির গৌরব রয়েছে যার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে।
এছাড়াও পুলিশ সুপার হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলায় সন্ত্রাস ও গডফাদার দমনে অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার স্বাক্ষর রাখা শাহ মিজান শাফিউর রহমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগে উপ পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালন শেষে এখন ঢাকার এসপি।
**তদবিরবাজদের মাথায় হাত!
**১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি!
বাংলােদশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
এসএইচ