শনিবার (২২ এপ্রিল) ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘অবিস্মরণীয় অমার্জনীয়: রানা প্লাজা’ শিরোনামে এক জরিপে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
১৪০৩ আহত শ্রমিক ও ৬০৭ জন মৃত শ্রমিকের পরিবারের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা পরির্দশন বিভাগের অতিরিক্ত পরিদর্শক জেনারেল ড. আনোয়ার উল্লাহ বলেন, আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যেসব ভবনে কারখানাগুলো রয়েছে, সেগুলো বেশিরভাগেরই মালিক আর ব্যবসায়ী এক নয়। ভাড়া বাড়িতে চলছে। রানা প্লাজায় আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকদের পরিবারের জন্যে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার সেফটি ফোরামের আহ্বায়ক হামিদা হোসেন বলেন, যেসব বিদেশি সংস্থা সহায়তার কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, সেসব প্রোগ্রামের বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে। সেগুলো কি অবস্থায় রয়েছে জানতে হবে। আহত শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্য করা হলেও, ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এডিশনাল রিসার্চ ডাউরেক্টর ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আহত শ্রমিকদের টাকা ভাগ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে সেই টাকা আর কাজে আসেনি। তাদের গড়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা মাসে শুধু চিকিৎসায় খরচ হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক তৌমো পেশিনিয়ানেন বলেন, যেসব শ্রমিকরা আহত হয়েছেন, তাদের উপযুক্ত কাজের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরির ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।
জরিপের ফলাফল উপস্থাপনে জানানো হয়, ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশের শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল, ১২ দশমিক ৪ শতাংশের সম্পূর্ণভাবে স্থিতিশীল এবং ১৩ দশমিক ১ শতাংশের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই ১৩ দশমিক শতাংশ বলেছেন যে তারা বর্তমানে মাথা ব্যথা, হাত পায়ে ব্যথা এবং পিঠে ব্যথা মতো সমস্যাগুলো প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করছেন।
মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশের মানসিক অবস্থা এখনও স্বাভাবিক না, যা গত বছরে ছিল ৫৭ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে ৫৭ দশমিক ২ শতাংশ বলেছেন, তাদের অবস্থা মোটামুটি ভাল এবং ১২ শতাংশ বলেছেন যে তারা সম্পূর্ণভাবে ভালো।
গত ৫ বছরে কর্মসংস্থানে যুক্ত হওয়ার হার বেড়েছে। জরিপে দেখা যায় যে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ আহত শ্রমিক বিভিন্ন চাকরি বা আত্মকর্মসংস্থানের নিযুক্ত আছেন। অন্যদিকে ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ জানিয়েছেন যে তারা এখনও বেকার। যারা বেকার তাদের বেকারত্বেও প্রধান কারণ শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা।
আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ এর নীচে আয় করেন। আর ৪২ শতাংশ আহত শ্রমিকদেও মাসিক আয় ৫ হাজার ৩০১ টাকা থেকে ১০ হাজার ৩০১ টাকা। অন্যদিকে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমিকদেও আয় ১০ হাজার ৩০১ টাকা থেকে ১৫ হাজার ৩০০ টাকা।
মৃত শ্রমিক পরিবারের অধিকাংশের প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তা ছাড়া আর কোনো প্রকার সঞ্চয় নেই। গত ১০ মাসে প্রশিক্ষণ নিয়েছে ৯৭ জন, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা পেয়েছেন ১২১ জন এবং স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন ১১৫ জন।
অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সঞ্চালনায় জরিপ উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ এলায়েন্স ফর ওয়ার্কাস সেফটি’র ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর পল এডওয়ার্ড রিজভী।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
এমএন/এসএইচ