টাঙ্গনের যৌবন হারানোর প্রভাব পড়ে নদীর আশপাশের এলাকাগুলোতেও। নদীর দুই পাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়।
এই ২০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ খরচ গুনতে হতো। এ কারণে অধিকাংশ জমিই পড়ে থাকতো অনাবাদি হয়ে।
তবে এই এলাকার কৃষকের মুখে হাসি ফোটায় একটি রাবার ড্যাম। ২০১৩ সালে দুই উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গন নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখতে নির্মাণ করা হয় একটি রাবার ড্যাম।
এই রাবার ড্যাম নির্মাণের পর থেকেই হাসি ফোটে দুই উপজেলার প্রায় ২১টি গ্রামের মানুষের মুখে। রাবার ড্যামের সেচের আওতায় আসে টাঙ্গন নদীর দুই পাশের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমি। রাবার ড্যাম নির্মাণের পর এই এলাকার শত শত কৃষকের জীবন বদলে গেছে। বোচাগঞ্জ উপজেলার রাণীরঘাট ও পীরগঞ্জ উপজেলার সাগুনী রাবার ড্যাম এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গন নদীর উপর নির্মিত রাবার ড্যাম ফুলিয়ে নদীর বুকে ধরে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি। আর যে পানি দিয়ে চলতি শুষ্ক মৌসুমে বোচাগঞ্জ উপজেলায় সুলতানপুর, সেনিহারি, ফুটকিবাড়ি, রানীরঘাট ও পীরগঞ্জ উপজেলার সাগুনি, বাঁশগাড়া, চাপোড়, মছলন্দপুর, মশালডাঙ্গী, শিরাইল, জগন্নাথপুর, চান্দোহরসহ টাঙ্গনের দুপাশের প্রায় ২১ গ্রামের বিশাল এলাকা জুড়ে জমিতে চাষাবাদ করছেন কৃষকরা।
স্থানীয় আলতাফ হোসেন নামের এক কৃষক বাংলা নিউজকে জানান, দীর্ঘদিন এই খরা মৌসুমে পানির অভাবে চাষাবাদ করতে পারতোনা এখানকার কৃষকেরা। নদীতে পানি না থাকায় শ্যালো মেশিন চালু করেও পানি লেয়ার পাওয়া যায়নি। কোন স্থানে লেয়ার পাওয়া গেলেও জমিতে সেচ দিতে খরচ হতো বেশি।
কিন্তু এখন রাবার ড্যাম নির্মাণের পর থেকে খরা মৌসুমেও নদীতে পানি থাকছে। আর যে কারণে খরা মৌসুমেও যেকোন ফসল চাষাবাদ করতে পারছেন তারা। বর্তমানে যে কোন ফসল চাষাবাদ করতে খরচ কম লাগছে। বোচাগঞ্জ উপজেলার ছাতইল ইউনিয়নের সপানি গ্রামের জাফরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এই রাবার ড্যাম আমাদের এলাকার কৃষকদের ভাগ্য বদল করে দিয়েছে। এক সময় পানির অভাবে হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকত। রাবার ড্যাম নির্মাণের পর থেকে বর্তমানে পানির জন্য আর হাহাকার করতে হয় না কৃষকদের। পানির আর অভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি চাষাবাদে বেড়েছে ফলন।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে পানি না থাকলে এর আশপাশের এলাকার ভূ-গর্ভের পানির স্তরও কমে যায়। বর্তমানে টাঙ্গন নদীর উপর পানি থাকায় নদীর আশপাশের এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর উপরে উঠে এসেছে। আর এই কারণে টাঙ্গন নদীর দুপাশের জমি গুলোতে দ্বিগুণ ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘন্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
আরআই