যাত্রীদের দাবি বুধবার (১৯ এপ্রিল) থেকে সিটিং সার্ভিসে ফিরে আসায় গড়ে ৫ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে স্পেশাল সুপ্রভাত।
শুক্রবার (২১ এপ্রিল) বাসটি সিটিং চললেও কমপক্ষে ৬ যাত্রীকে অতিরিক্ত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
একটু পর পর হট্টগোল করতে দেখা যায় বাসের ভেতরে থাকা যাত্রীদের।
যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে কখনো কখনো কন্ডাক্টর তেড়ে আসছেন যাত্রীদের দিকে।
বাস যাত্রী আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, এর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় চালকদের সাজার বিধান করা হয়। কিন্তু এ সাজার বিরুদ্ধে চালকরা আন্দোলনে নেমে জয়ী হন। গত ১৬ এপ্রিল থেকে সিটিং বন্ধ করা হলেও তারা মানেনি। বরং লোকাল বাস চালিয়ে সিটিংয়ের ভাড়া আদায় করেছে। কৌশলে শ্রমিকরা কৃত্রিম বাস সংকটের নামে যাত্রীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
বিআরটিএ’কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা নতুনভাবে বিজয়ী হয়ে দ্বিগুণ শক্তিতে মাঠে নেমেছে।
দ্বিতীয় বার এ জয় তাদের অদম্য বেপয়োরা করে তুলেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণের কোনো ক্ষমতাই সরকারের নেই।
একই অবস্থা বিরাজ করছে রাজধানীজুড়ে সব রুটের সিটিং সার্ভিস বাসগুলোতে। যাত্রীদের দাবি গণপরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ রোড টান্সপোর্ট অথরিটি যে উদ্যোগ নিয়েছে তা পুরোপুরি ভেস্তে গেছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ যাত্রীরা। অনেকটা ফ্রি স্টাইলে চলছে রাজধানীর গণপরিবহন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত চারদিনে বাসগুলো লোকালে পরিণত হয়ে যতটুকু কম উপার্জন করেছিলো তা পুষিয়ে নিতে এখন গড়পরতায় স্থান ভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বাসের কন্ডাক্টররা।
সুপ্রভাত স্পেশালের চালক ওমর বাংলানিউজকে বলেন ‘আগে ট্রিপ মারতাম দিনে ৫টি। এহন বাড্ডায় রাস্তা কাটার ফলে দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে পড়ে থাকতে হয়। এখন দৈনিক ৩টার বেশি ট্রিপ মারা যায় না। আর এ কারণে মালিক প্রতিদিন গালি দিয়ে আমাদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেন।
কেনো বেশিভাড়া নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি ট্রিপে পাই ১৫০ টাকা তিন ট্রিপ থেকে আসে ৪৫০ টাকা, আগে আসতো ৭৫০ টাকা। এ টাকায় খামু কি আর পরমু কি? সবাই নিজেরডা দেহে। আমাদেরটা তো কেউ দেহে না। না দেখে সরকার না দেখে দেশের জনগণ। বেশ হতাশার সুরে বললেন ওমর। ’
মিরপুর ১০ নম্বরের প্রজাপতি পরিবহনের যাত্রী আমিনুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে বাংলানিউজকে বলেন, এটা নাটক ছাড়া কিছু না। আমরা সব বুঝি। সিটিং তো চলেই না আবার ভাড়াও বেশি। প্রতিনিয়ত ভাড়া নিয়ে চালক ও কন্ডাক্টরের সঙ্গে মাঝে মাঝে তর্ক কখনও কখনও হাতাহাতিতে রূপ নিচ্ছে।
এসবের জন্য সরকার দায়ী। সরকার পরিবহনখাত নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। আর এ পরিবহন নৈরাজ্যের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীরাই জড়িত বলে মন্তব্য করেন যাত্রী আমিনুল ইসলাম।
ভাড়া কতো বেশি নিচ্ছে? জানতে চাইলে আমিনুল বলেন, ‘কম দূরত্বের ভাড়া আগে ছিলো ৩০ টাকা এখন নিচ্ছে ৩৫ টাকা। ওদের হিসেবে এখন সর্বনিম্ন ভাড়া ৩৫ টাকা’।
প্রজাপতি পরিবহনের কন্ডাক্টর লতিফ বাংলানিউজকে জানান, ভাড়া বেশি না। আগে কম ভাড়া ছিলো। এখন মালিক এ ভাড়া তুলতে বলছে। যার ইচ্ছা হইলে যাইবো নাইলে নাই। লোকাল তো আছেই। তাতে যাইবো’।
এর আগে, গত ১৭ এপ্রিল বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, সিটিং বাস চালুর গুজব মিথ্যা। বিআরটিএ’তে সিটিং সার্ভিস চালুর কোনো নিয়ম নেই।
নিয়ম না থাকলেও গত ১৯ এপ্রিল থেকে আবার কেনো পনেরদিন সময় নেওয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখেই পনের দিনের জন্য আগের ঘোষণা স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এখন বাসমালিক, পরিবহন নেতা, শ্রমিক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি সিটিং বাস চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবে এর জন্য নতুন নীতিমালা তৈরি করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
আরএটি/আরআইএস/বিএস