সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রত্যেকটি ঘটনার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মাস পেরিয়ে বছর চলে গেলেও জমা হয় না তদন্ত প্রতিবেদন।
জানা যায়, গত বছরে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এক শিক্ষকের নাম আসায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দীর্ঘ ৯ মাস পর ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বরে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। আর এ কমিটির সদস্য সচিব করা হয় সহকারী প্রক্টর এইচ এম তারিকুল ইসলামকে; যার সদস্য হন সহকারী প্রক্টর ছদরুল ইসলাম সরকার। তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এই কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
এর আগে ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মুখতার ইলাহী হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুইগ্রুগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দুই গ্রুপের দশ জন আহত হন।
পরে উপাচার্যের নির্দেশে একই বছরের ২০ জুলাই ছদরুল ইসলামকে আহ্বায়ক, তৎকালীন সহকারী প্রক্টর শফিক আশরাফ এবং সামসুজ্জামানকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সেই সময়ে প্রশাসন আশ্বস্ত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলেও এখনও পর্যন্ত প্রতিবেদনই জমা দেয়নি কমিটি। ফলে দোষীরা প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও দীর্ঘ সময়েও তাদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর প্রায় দুই বছর পর গত ২৯ জানুয়ারি একই হলে (মুখতার ইলাহী) বৈধ সিটে উঠতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আল আমিন হোসাইন এবং যুগ্ম সম্পাদক সৌম্য সরকারকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এই ঘটনায় মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট ফেরদৌস রহমানকে আহ্বায়ক, সহকারী প্রক্টর ছদরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে এবং রশিদুল ইসলামকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ফেরদৌস রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। দ্রুত জমা দেয়া হবে। ’
তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কমিটি গঠন করা হয় ঠিকই, কিন্তু কমিটি তার প্রতিবেদন জমা দেয় না। প্রতিবেদন জমা না দিলেও এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোন কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থীর বলেন, প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করছে। এজন্যই লোক দেখানো তদন্ত কমিটির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবির সুমন বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিৎ তদন্ত কমিটির সদস্যদের চাপ প্রয়োগ করা আর তদন্ত কমিটির সদস্যদেরও উচিৎ দায়িত্ব থেকে তদন্ত প্রতিবেদন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দেয়া।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩নং একাডেমিক ভবনের ছাদ থেকে পানির ট্যাঙ্ক পরে তিন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় সহকারী প্রক্টর আতিউর রহমানকে আহ্বায়ক, সহকারী প্রক্টর ছদরুল ইসলাম সরকারকে সদস্য এবং প্রক্টর দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মনিরা খাতুনকে সদস্য সচিব করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হলেও ঘটনার ২০দিন পেরিয়ে গেলেও তা এখনও জমা হয়নি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র তাবিউর রহমান প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, যথাশিগগির উচিত সকল তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়া। বিভিন্ন সময় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোকে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য তাগদা দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৯
এমএ/