ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ড. সামাদের পরিবার 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৯
সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ড. সামাদের পরিবার 

ময়মনসিংহ: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীর গুলিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ এখনো বেঁচে আছেন না কী মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করেছেন বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তার পরিবারের সদস্যরা। 

তারা আশাবাদী ড. সামাদের দেহে এখনো প্রাণ আছে। ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ক্রাইস্টচার্চের হাসপাতালে অবস্থান করেও স্ত্রী ও দুই সন্তান তার ‘মরদেহ’ শনাক্ত করতে পারেননি।

 

এর ফলে পরিবারের সদস্যরা আরো বেশি আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন। আরো এক থেকে দু’দিন পর পুরো বিষয়টি খোলাসা হবে। তবে সবকিছুই তারা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকায় বসবাসরত বড় ছেলে তোহা মোহাম্মদ।  

শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাংলানিউজের সঙ্গে মোবাইল আলাপচারিতায় এ তথ্য জানান তিনি।  

ক্রাইস্টচার্চে হাসপাতালে মরদেহ শনাক্তে বিলম্ব হওয়ায় স্থানীয় লোকজন ক্ষোভে ফুঁসে ওঠছেন বলেও জানান তোহা।  

তিনি বলেন, মায়ের সঙ্গে আজো (শনিবার) কয়েকবার আমার কথা হয়েছে। সেখানকার লোকজন খুবই উত্তেজিত। শান্তি ও স্বর্গের দেশে এমন বর্বর সন্ত্রাসী হামলা তাদের বিক্ষুব্ধ করছে। স্বজন হারানোর বেদনায় তারা কাতর।  

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগে চাকরি ছেড়ে ২০১৩ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন ড. আবদুস সামাদ। তার সঙ্গে নাগরিকত্ব নিয়ে থাকতেন স্ত্রী কেশোয়ারা সুলতানা, দুই ছেলে তারেক মোহাম্মদ ও তানভীর মোহাম্মদ।  

ড. সামাদ-কেশোয়ারা দম্পত্তির বড় ছেলে তোহা বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর আগে আমার বাবা স্থানীয় লিংকন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন। তিনি খুবই ধর্মপরায়ণ ছিলেন এবং সন্ত্রাসকে ঘৃণা করতেন।  

বাবা হামলার শিকার আল নুর মসজিদের মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিয়মিত তাবলিগ জামাতও করতেন।

বাবার সম্পর্কে বলতে গিয়েই গলা ধরে আসে তোহার। নিজেকে সামলে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আশাবাদী আব্বা বেঁচে আছেন। আবার পরিস্থিতিও অনুধাবন করছি। আমার আম্মা খুব শক্ত মনের মানুষ।  

তবে আমরা চিন্তিত আমার দুই ছোট ভাইকে নিয়ে। আম্মাকে নিয়ে কোনো টেনশন নেই। ভাগ্যের ওপর সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি।  

শনিবার (১৬ মার্চ, বাংলাদেশ সময় সকালে) নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার ক্রাইস্টচার্চে হাসপাতালে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় অপেক্ষারত স্বজনদের সঙ্গে এসে কথা বলেন।  

মায়ের বরাত দিয়ে সেই তথ্য জানিয়ে তোহা বলেন, মরদেহ শনাক্ত করতে কতোদিন সময় লাগবে এ প্রশ্ন পুলিশ কমিশনারকে করেছিলেন সবাই।  

তখন তিনি বলেছিলেন, শুক্রবার পর্যন্ত সময় লাগবে। তখন স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ প্রকাশ করলে তিনি বলেন আরো এক থেকে দু’দিন সময় লাগবে। এরমধ্যেই সবারটা শনাক্ত হয়ে যাবে।  

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে হতাহতের ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জনকে সরকারিভাবে বিভিন্ন শহরে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলেও নিজের পরিবারের বরাতে বাংলানিউজকে জানান তোহা।  

তিনি জানান, ওইসময় তাৎক্ষণিকভাবে অনেক রোগীকে এয়ার প্লেনে করে বিভিন্ন শহরের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদের সংখ্যা হবে ১০ থেকে ১২ জন।

ওইসময় যাদের দ্রুত অপারেশন দরকার ছিলো তাদেরেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাড়াহুড়া করে নিয়ে যাওয়ার ফলে এদেরও শনাক্ত করা হয়নি। এজন্য সময় লাগবে বলছিলেন তোহা।  

নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান অণু সন্ত্রাসীর গুলিতে ড. আব্দুস সামাদের সঙ্গে তার স্ত্রী কেশোয়ারা সুলতানারও মৃত্যু হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে প্রথম দিকে জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাদের সেখানে অবস্থানরত দুই সন্তান তারেক ও তানভীর।  

এ তথ্য জানিয়ে তোহা মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, কনসাল জেনারেলকে আমার ছোট ভাই বলছে, আমার আম্মা বেঁচে আছেন। হাসপাতালের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি কেন বলেছেন, আম্মা মারা গেছেন? পরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।  

প্রসঙ্গত, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে উগ্র মুসলিম বিদ্বেষ থেকেই দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে ৪৯ মুসল্লিকে হত্যা করে অস্ট্রেলিয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট। এ হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৯
এমএএএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।