ঢাকা, শনিবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেড় কোটির গাড়িসহ কেনাকাটা নিয়ে প্রশ্ন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
দেড় কোটির গাড়িসহ কেনাকাটা নিয়ে প্রশ্ন

ঢাকা: একটি প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ যন্ত্রপাতি কিনতে ২৯ কোটি ৮০ লাখ এবং একটি জিপ গাড়ি কেনার জন্য ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

 

‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাবে এ ধরনের অধিক ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।  

প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। জানুয়ারি ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে তা বাস্তবায়ন করা হবে।  

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশন ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়।  

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১৫টি নির্মাণ সামগ্রীর জন্য অধিক ব্যয় চেয়েছে বলে দাবি পরিকল্পনা কমিশনের। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ১৫টি নির্মাণ যান- যন্ত্রপাতির ব্যয় প্রাক্কলন করার জন্য পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য একটি কমিটি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে। কমিটর সদস্যও নির্বাচন করবে কমিশন। টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশের আলোকে ১৫টি নির্মাণ সামগ্রীর দাম নির্ধারণের বিষয় বলা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে করোনার সময় সরকার আর্থিক টানা পোড়েনে আছে। ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য প্রকল্পের আওতায় যানবাহন কেনাকাটায়ও সতর্ক করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় একটা জিপ কেনাকে অত্যাধিক মনে করা হয়েছে। কোন প্রকল্পে কোন কর্মকর্তার জন্য কেমন গাড়ি কেনা হবে এই বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটা সার্কুলার আছে, সেই সার্কুলার অনুযায়ী যানবাহন কেনার জন্য চসিককে সুপারিশ করেছে কমিশন। অর্থ বিভাগের পরিপত্র ও প্রকল্প পরিচালকের স্কেল / প্রাপ্যতা অনুযায়ী জিপ গাড়ির ব্যয় প্রাক্কলন করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ১৫টি নির্মাণ সামগ্রী কেনার জন্য যে ব্যয় চাওয়া হয়েছে তা আমাদের কাছে অত্যাধিক মনে হয়েছে। কিসের ভিত্তিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে তার কোন বিস্তারিত তথ্য নেই। এই জন্য আমরা একটা  টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করতে বলেছি। কমিটির সদস্য আমরা ঠিক করে দেবো। তাদের সুপারিশের আলোকেই নির্মাণ সামগ্রীর দাম নির্ধারণ করা হবে।

গাড়ি কেনা প্রসঙ্গে সচিব বলেন, গাড়ির জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের একটা সার্কুলার আছে। সেই সার্কুলার অনুযায়ী গাড়ি কেনা হবে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন রাস্তার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, ব্রিজ, কালভার্ট, ফুটওভার ব্রিজ, ওভারপাস, গোলচত্ত্বর ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে যানজট হ্রাস এবং সর্বোপরি নাগরিক সেবা বৃদ্ধির প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সভাপতির অনুমতিক্রমে পিইসি সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম প্রকল্পটির সার্বিক প্রস্তাবনা সভায় তুলে ধরেন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। চট্টগ্রাম বন্দর, আমদানি-রপ্তানি এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজস্ব অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য পণ্যবাহী গাড়ি সিটি কর্পোরেশন এলাকার সড়ক ব্যবহার করে থাকে। শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম গত এক দশকে অনেকগুণ বেড়েছে । তাই শহরের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন অত্যন্ত জরুরি। এর পরিপ্রেক্ষিতে শহর এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ, কালভার্ট, ব্রিজ, ওভারপাস, গোলচত্বর এবং রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ক্রয়, ইউটিলিটি স্থানান্তর, ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর নগরবাসীকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান, যানজট নিরসন, নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি তথা নাগরিক সেবা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

নির্মাণ যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও প্রস্তাবিত প্রকল্পে এত বেশি পরিমান নির্মাণ যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জানায়, এগুলো মূলত রাস্তা মেরামত ও নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট যান যন্ত্রপাতি। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে এ সকল যান-যন্ত্রপাতির কারিগরি বর্ণনা সংযুক্ত করা হবে। ১৫টি নির্মাণ যন্ত্রপাতি ব্যয় প্রাঙ্কলন একটি কমিটি কর্তৃক প্রস্তুত করে এগুলোর বিস্তারিত কারিগরি বর্ণনা এবং ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তা যৌক্তিকভাবে ডিপিপিতে উল্লেখ করতে সভায় একমত পোষণ করা হয়। এছাড়া প্রকল্প পরিচালকের প্রাপ্যতা অনুযায়ী জিপ গাড়ির ব্যয় প্রাক্কলন অর্থ বিভাগের নির্ধারিত পরিপত্র অনুযায়ী নির্ধারণ করার বিষয়ে সভায় মতামত জ্ঞাপন করা হয়।

 প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৭৬২ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন বাবদ ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকা, ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণ বাবদ ৮৪ লাখ টাকা, ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ বাবদ ৫৮ কোটি টাকা, ১৪টি ব্রিজ নির্মাণ বাবদ ৫৬ কোটি টাকা, ২২টি কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১৪ কোটি টাকা ও ১০টি গোলচত্ত্বর নির্মাণ বাবদ ১২ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এ সব অবকাঠামো নির্মাণের বিস্তারিত একক ব্যয় বিভাজন এবং এগুলোর ধারণাগত ড্রইং, ডিজাইন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি  বলে দাবি কমিশনের।

প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম যেমন- রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, ফুটওভার ব্রিজ, ওভারপাস, গোলচত্বর নির্মাণ, যন্ত্রপাতি, ইউটিলিটি স্থানান্তর এবং পরামর্শকের যথাযথ বর্ণনা চাওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, ডিপিপিতে শুধু ফুটওভার ব্রিজ কোথায় কোথায় নির্মাণ করা হবে তার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ব্রিজ, কালভার্ট, গোলচত্বর কোথায় কোথায় নির্মাণ করা হবে তার স্থান উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া এগুলো নির্মাণের যৌক্তিকতার বিষয়ে সভায় জানতে চাওয়া হলে চসিক জানায়, সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রাপ্ত সুপারিশ ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এ সকল অবকাঠামোসমূহের সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এলজিইডি রেট সিডিউল, ২০২০ অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে স্ট্রাকচার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫৭ কোটি এবং ইউটিলিটি স্থানান্তর বাবদ ২০ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। স্ট্রাকচার ক্ষতিপূরণ গণপূর্ত অধিদপ্তরের দরের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু সাল উল্লেখ করা হয়নি এবং ইউটিলিটি স্থানান্তর এলজিইডি ২০২০ এর দর অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কতগুলো স্ট্রাকচার তথা ভবনের জন্য এই ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হচ্ছে তার বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন ও ইউটিলিটি স্থানান্তরের ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে উল্লেখ নেই বলে দাবি কমিশনের।

৩৬ জনমাসের জন্য পরামর্শক বাবদ ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। রাস্তা উন্নয়ন, গোলচত্বর, ব্রিজ, কালভার্ট, ফুটওভার ব্রিজ ইত্যাদি রুটিন মাফিক কাজের জন্য পরামর্শক ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।