ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ভোগান্তির আরেক নাম কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়ক

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২১
ভোগান্তির আরেক নাম কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়ক

গাজীপুর: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়কের বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরে। যান চলাচলের অনুপোযোগী এসব সড়কে বাধ্য হয়েই চলাচল করতে হয় যাত্রীদের।

সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে ভাঙ্গাচুরা আর খানাখন্দে ভরা। হাঁটু পানিও জমে থাকে কয়েক জায়গায়। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ আর ভোগান্তির।

কোনাবাড়ী থানার সামনে, যমুনা কারখানা, জরুন বাজার, ডেলটা গার্মেন্টস সংলগ্নসহ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে খানাখন্দ এবং হাঁটু পানি জমে আছে।  

এলাকাবাসী জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী বিসিক শিল্প নগরী এলাকা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়কটি দিয়ে কোনাবাড়ী থেকে ঢাকার যে কোনও প্রান্তে যাওয়া আসা করা যায়।
তারা আরও জানায়, কোনাবাড়ী এবং কাশিমপুর এলাকা দুটিতেই গড়ে উঠেছে শতশত শিল্প কারখানা। এসব কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এ কারণে সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে ভাঙাচোরা এবং খানাখন্দে ভরা। কোথাও কোথাও হাঁটুপানির ও বেশি জমে আছে সড়কটিতে। ফলে যে কোনও ধরনের যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভাবেই চলছে এসব যানবাহন। ঝুঁকি নিয়ে চালকরা এসব খানাখন্দের ওপর দিয়েই চলছে যানবাহন। মাঝে মধ্যেই উল্টে যাচ্ছে রিক্সা ও ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন। কোনাবাড়ী কাশিমপুর সড়কটি দিয়ে চলে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, কভার্ডভ্যান, বাস-ট্রাক, মোটরসাইকেল এবং এম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহন। এসব যানবাহন সড়কটি দিয়ে চলাচল করে ঝুঁকি নিয়ে।  

তবে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি মেরামত করার কথা ভাবছেন না কেউ। দীর্ঘদিনের এ ভোগান্তি আর দুর্ভোগ কবে শেষ হবে এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর।  

এলাকাবাসী জানায়, এ সড়কটিতে সবসময়ই যানজট লেগে থাকে। অনেক সময় মানুষ হেঁটে গেলে মানুষেরও জট লেগে যায়। এ সময় শত শত মানুষকে সড়কের পাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গাড়ি চলাচলের সময় সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন দোকানগুলোতেও ছিটকে যাচ্ছে কাঁদা পানি। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জায়গায় অনেক ব্যবসায়ী দোকানপাট বন্ধ করে বেকার সময় কাটাচ্ছে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে।  

এছাড়া কোনাবাড়ী এবং কাশিমপুর মেট্রোপলিটন থানা পুলিশকে গাজীপুর শহর কিংবা আদালতে যেতে হয় এ সড়কটি দিয়েই। আসামি নেওয়া আনা করতে হয় এবং বিভিন্ন জরুরী কাজে এ সড়ক দিয়ে পুলিশকে চলাফেরা করতে হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদেরও।  
এদিকে শিল্প কারখানার মালামাল নেওয়া আনা করতে হয় এ সড়কটি দিয়েই। কোথাও আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এবং এম্বুলেন্সও রোগী নিয়ে দ্রুত সড়কটি দিয়ে পৌছাতে পারেনা হাসপাতালে। পানি জমে থাকতে-থাকতে কোনাবাড়ী কাশিমপুর সড়কটি  অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।  

কোনাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা নুর আলম জানান, কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়কের পাশেই আমাদের ফার্নিচারের দোকান রয়েছে। দোকানের মালামাল বিক্রি করলে এ সড়ক দিয়েই নিতে হয় এবং কারখানা থেকে মালামাল এ সড়ক দিয়ে দোকানে আনতে হয়। এছাড়া অন্য কোন সড়ক নেই। কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়কের এমন পরিস্থিতি যে, কোন গাড়ি গেলেই কাত হয়ে যায়। অনেক ঝুঁকি নিয়েই এ সড়ক দিয়ে মালামাল আনা নেয়াসহ আমাদের চলতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।  
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জরুরী কোন কাজে দ্রুত যেতে চাইলে  কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়ক দিয়ে যাওয়া যায় না। রাস্তাটি ভাঙা, খানাখন্দ এবং পানি জমে থাকায় সবসময়ই যানজট লেগে থাকে ফলে দ্রুত যাওয়া সম্ভব হয় না। হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ নিরসন সড়কটি দ্রুত মেরামত করা উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।  

এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সেলিম রহমান বলেন, লাখ লাখ মানুষের যাতায়াত, হাজার হাজার গাড়ি চলছে কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়কটি দিয়ে। এছাড়া বিভিন্ন কারখানার মালামাল আনা নেয়া এ সড়কটি দিয়েই। সড়কটির ওপর অনেক প্রেশার কিন্তু সড়কটি দুর্বল। জমি অধিগ্রহণ করে সড়কটি প্রশস্ত করা হবে। আগামী ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই আশা করছি সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।  
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি কারখানার কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার অনেক টাকার রাজস্ব পায়। এছাড়া সিটি করপোরেশনকে ট্যাক্স দিয়ে থাকি। কিন্তু আমরা তাদের কাছ থেকে তেমন সেবা পাচ্ছি না। সড়কটি দ্রুত মেরামত করতে কারও মাথাব্যাথা নেই। এ দুর্ভোগ মানুষ কতদিন সহ্য করবে। একদিকে যানজট লেগে থাকে অন্যদিকে ভাঙা। পানি জমে থাকা সড়কটি দিয়েই লড়াই করে চলতে হয় প্রতিদিন।  

এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, সড়কটি টেন্ডার লিস্টে গেছে। যার জন্য সরকারি বরাদ্দ দিতে পারছিনা। অধিগ্রহণ করে অনেক বড় সড়ক করা হবে। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন খানাখন্দ মেরামত করি। নিজের টাকা দিয়ে এভাবে আর কতদিন মেরামত করা যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২১ 
আরএস/এনএইচআর
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।