ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি শিক্ষার্থীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২২
দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি শিক্ষার্থীদের

ঢাকা: রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনার জেরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।  সংশ্লিষ্ট এলাকার ডিসি, এডিসি ও নিউ মার্কেট থানার ওসির প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।

এমনকি দাবি অনতিবিলম্বে কার্যকর না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২০ এপ্রিল) দিনগত রাতে ঢাকা কলেজের শহীদ আ. ন. ম. নজীব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এসব কথা জানান ঢাকা কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী সুজয় বালা ও মাসুম বিল্লাহ।

লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, সম্প্রতি পুলিশ প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে সেটি নোংরামির চরম মাত্রা অতিক্রম করেছে।

ঘটনার বিবরণে তারা বলেন, সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টায় নিউ মার্কেটের ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড দোকানের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করা হয়। খবরটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে কলেজের সামনের মিরপুর সড়কে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান।

সেখান থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার সময় নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকাররা শিক্ষার্থীদের নামে গুজব ছড়িয়ে একযোগে হামলা চালান। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, ডিএমপির রমনা জোনের এডিসি হারুন-অর-রশিদ ও নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স. ম. কাইয়ুম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করেই ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

পুলিশের উপস্থিতিতে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকাররা ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে হামলা চালায়। হামলা প্রতিরোধ করতে গেলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে নির্বিচারে ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ঢাকা কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত শিক্ষার্থীরা এখনও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরপর রাত ৩টায় ঢাকা কলেজের শিক্ষকরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় ঘটনার তদন্ত ও বিচার চেয়ে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে প্রতিবাদ জানায়। তখনও নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে ফের ঐক্যবদ্ধভাবে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।

এমনকি শিক্ষকরা প্রধান ফটকে গেলে তাদেরও লাঞ্ছিত ও হামলা করে আহত করা হয়। পরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পুলিশ আবারো নির্বিচারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও গুলি চালায়।

এক সময় শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়। তখনও পুলিশ রায়ট কার থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ভেতরে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পরে বেশ কয়েকবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

এই হামলার প্রধান ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্থানীয় ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন, ফরমান মোল্যা, জাহাঙ্গীর হোসেন, আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপুসহ আরো অনেকে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো—

১. এই ন্যক্কারজনক হামলার উস্কানিদাতা, ইন্ধনদাতা ও হামলাকারীদের তদন্ত-সাপেক্ষে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সব দায়ভার নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিতে হবে।

৩. হকারদের হামলায় নিহত পথচারী নাহিদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৪. রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

৫. দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডিসি, এডিসি ও নিউ মার্কেট থানার ওসিকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং পুলিশ প্রশাসনকে কলেজ প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

৬. প্রতিটি মার্কেট ও দোকানে সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে।

৭. প্রতিটি মার্কেটে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে।

৮. ফুটপাত দখলমুক্ত, অবৈধ কার পার্কিং উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

৯.  ক্রেতা হয়রানি, নারীদের যৌন হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে ক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

১০. চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নিউ সুপার মার্কেটে ঢাকা কলেজের সম্পদ লিজ বাতিল করে ফিরিয়ে দিতে হবে।

>>> আরও পড়ুন: নিউমার্কেটে উড়ছে শান্তির সাদা পতাকা

***নিউমার্কেটে সংঘর্ষে আহত দোকান কর্মচারী মোরসালিনের মৃত্যু

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২২
পিএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।