ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ই-কমার্সের নামে ২৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেফতার ৬

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২০
ই-কমার্সের নামে ২৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেফতার ৬ গ্রেফতার ৬ প্রতারক

ঢাকা: ই-কমার্স ব্যবসার নামে প্রতারণার মাধ্যমে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস নামে একটি এমএলএম কোম্পানি।

প্রতিষ্ঠানটি ডেসটিনির মতোই পিরামিড পদ্ধতিতে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গত ১০ মাসে ২২ লাখ সদস্যের কাছ থেকে এই পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ‘এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস’ প্রতিষ্ঠানের ৬ প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

গ্রেফতার আসামিরা হলেন- এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলামিন প্রধান, নির্বাহী অফিসার মো. জসীম, ম্যানেজার মো. মানিক মিয়া, ম্যানেজার (প্রোডাকশন) মো. তানভীর আহম্মেদ, সহকারী ম্যানেজার (প্রোডাকশন) মো. পাভেল সরকার এবং অফিস সহকারী নাদিম মো. ইয়াসির উল্লাহ। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১টি হ্যারিয়ার গাড়ি, ২টি পিকআপ ভ্যান, সার্ভারে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, রাউটার, ২টি পাসপোর্ট ও কোম্পানির বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ই-কমার্সের নামে অনলাইনভিত্তিক মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পরিচালনা করে আসছিল। তবে এর জন্য প্রতিষ্ঠানের কোনো লাইসেন্স ছিল না। সাধারণ মানুষকে অধিক মাত্রায় কমিশন দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর কলাবাগান এফ হক টাওয়ারে কোম্পানিটির অফিসে অভিযান পরিচালনা করে ৪ প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতে প্রতারক চক্রের মূলহোতা আলামিন প্রধান ও নির্বাহী অফিসার জসিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেড নামের এই কোম্পানি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে। তবে প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র ই-কমার্স ব্যবসার লাইসেন্স নিয়েছিল। কোম্পানির এমডি আলামিন প্রধান এক সময় ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ডেসটিনি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার দীর্ঘ গবেষণায় একই পদ্ধতি অনুসরণ করে অনলাইনভিত্তিক এই প্রতারণা শুরু করেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। গত ১০ মাসে তারা উচ্চ কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে ২২ লাখ চব্বিশ হাজার ৬৬৮ জন সদস্যের আইডি থেকে মোট ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার কার‌্যক্রম সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় বাংলাদেশের বাইরে আরও ১৭টি দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি প্রায় পাঁচ লাখ সদস্য রয়েছে। এই কোম্পানিতে যুক্ত হতে হলে প্রথমেই একজন গ্রাহককে একটি অ্যাপস ডাউনলোড করতে হতো। এরপর সেখানে বাধ্যতামূলকভাবে বিকাশ, নগদ, রকেট মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর দিতে হতো। এর জন্য প্রতি গ্রাহককে ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হতো।

প্রতারণার কৌশল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা কোম্পানির ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে শত শত পোস্টের মাধ্যমে ই-কমার্সের কথা বলে সাধারণ মানুষকে লোভনীয় কমিশনের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। আগ্রহীরা গুগল প্লে স্টোর থেকে একটি মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করে। রেজিস্ট্রেশন করার সময় বাধ্যতামূলক আগের রেজিস্ট্রেশনের আপলিঙ্ক আইডির রেফারেন্সে বিকাশ, নগদ, রকেট নম্বরে একাউন্টের প্রতিটি আইডির জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের কমিশন যেমন (রেফার কমিশন, জেনারেশন কমিশন, রয়্যাল কমিশন) এর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছিল।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ই-কমার্সের নাম দিয়ে কৌশলে এলএমএল ব্যবসার আড়ালে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। কোম্পানিটি নামে মাত্র কয়েকটি পণ্য যেমন- অ্যালোভেরা শ্যাম্পু, ফেসওয়াশ, চাল, ডাল, মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি রেজিস্টার্ড সদস্যদের কাছে বিক্রি করে থাকে। তার লভ্যাংশ থেকে প্রতি আইডি হোল্ডারকে কোম্পানির বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখার বিনিময়ে ১০ টাকা করে দেওয়ার কথা বলে। গ্রেফতার আসামিরা ই-কমার্সের লাইসেন্স দেখিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস অর্জ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২০
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।