ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

করোনার দ্বিতীয় ‘ওয়েভ’ নিয়ে সতর্ক সরকার

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২০
করোনার দ্বিতীয় ‘ওয়েভ’ নিয়ে সতর্ক সরকার

ঢাকা: শীত মৌসুমে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য দপ্তরগুলো মাস্ক পরা বাধ্যকরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে বিশেষ জোর দিয়ে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে। সবার মুখে মাস্ক পরাটা বাধ্যতামূলক করতে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও তাদের অধীনে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিসস্ট্রেটদের মাধ্যমে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে নির্দেশনা দেবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নির্দেশনায় জানিয়েছে, আসন্ন শীত মৌসুমে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের সম্ভাব্য এ সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান এবং মাঠ পর্যায়েল সবার মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অথচ সম্প্রতি সবার মধ্যে মাস্ক ব্যবহারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে কিছুটা শিথিলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

‘এমতাবস্থায় মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান এবং মাঠ পর্যায়ের সব দপ্তরে ‘মাস্ক ব্যবহার ব্যতিত প্রবেশ নিষেধ/No Mask, No Entry', ‘মাস্ক পরিধান করুন, সেবা নিন/Wear Mask, Get Service' ইত্যাদি বার্তা উপযুক্ত মাধ্যমে (পাস্টার/স্টিকার/ব্যানার/বিলবোর্ড ইত্যাদি) দৃশ্যমান করাসহ সব সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহণকারীর মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। ’

‘বিষয়টি জরুরি’ উল্লেখ করে সব সিনিয়র সচিব/সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কাছে মঙ্গলবার চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে সভায় বসছে আগামী ৭ নভেম্বর। ওই দিন বিকেল ৩টায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তর/পরিদপ্তরে প্রেষণে নিয়োজিত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুনের সভাপতিত্বে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এ সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বিশেষ অতিথি ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত থাকবেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মূলত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। তবে করোনাকালে মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

সারাদেশে ৫২ জনের মতো এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট থাকলেও অনেককেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই দিন সারাদেশ থেকে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের ডাকা হয়েছে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় করণীয় সংক্রান্ত বিষয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সভায় মন্ত্রী বলেন, ইউরোপের অনেক দেশেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। অনেক দেশ এরই মধ্যে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার লকডাউন ঘোষণা করেছে।

‘বাংলাদেশেও আগামী শীতের সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা স্বাস্থ্যখাতের হাতে রয়েছে। তবে মানুষ যদি সচেতন না হয়, স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাহলে আগামীতে আবারও ভয়ের কারণ হতে পারে। কাজেই দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে হলে এ মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। বিশেষত সবার মুখে মাস্ক পড়া এ সময়ে অত্যন্ত জরুরি। একারণে দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা পর্যন্ত সবার মুখে মাস্ক পড়াটা বাধ্যতামূলক করতে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’

সভায় করোনায় দেশের স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতার বিষয়ে প্রশংসা করেন এবং পূর্বের সক্ষমতা ধরে রেখে নতুনভাবে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। শীতকালের সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো যাতে দল বেঁধে হতে না পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সভায় অনলাইন জুম ও অফলাইনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মুখ্যসচিব, সিনিয়র সচিব, সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অংশ নেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন জুমের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সেনাল, জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ্, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অনেকেই অংশ নেন ও তাদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২০
এমআইএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।