ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্বেষণে প্রতিবছর অসংখ্য লোক এ মহামানবের স্মৃতিচিহ্ন দেখতে আসে নরসিংদী তার নিজ বাড়িতে। বেশ কিছুদিন অযত্ন-অবহেলায় তার বাড়িটি পড়ে থাকলেও বর্তমানে সরকার, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ স্থানীয় প্রশাসন মিলে ভাই গিরিশ চন্দ্র্র সেনের বাড়িটাকে দিয়েছে একটি নতুন রূপ।
![...](https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2019May/bg/girish-chandara20190815140516.jpg)
ভাই গিরীশ চন্দ্র সেন ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে নরসিংদীর পাঁচদোনা গ্রামের বাড়িতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। আজ তার ১০৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।
দেশের দূর দূরান্ত থেকে লোকজন গিরীশ চন্দ্রের বাড়ি দেখার জন্য ছুটে এলেও হতাশ হয়ে ফিরে যেতেন একটা সময়ে। এই এলাকার বর্তমান প্রজন্ম যেমন জানেনা গিরিশ চন্দ্র সম্পর্কে তেমনি স্থানীয় লোকজনও ভুলতে বসেছিল তার ইতিহাস। কূটনীতিকসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা একাধিকবার এ স্থান পরিদর্শন করে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বিবর্তন ছাড়া পরিবর্তন হয়নি। তবে বর্তমান সময়ে পাল্টে গেছে তার রূপ।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে নরসিংদীর সদর উপজেলার পাঁচদোনা মেহেরপাড়ায় অবস্থিত ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি। সংস্কারের অভাবে আর দখলদারিত্বের চাপে প্রাচীন এ বাড়িটি তার পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছিল। ২০০৮ সালে বাড়িটির মূল কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কারে অনুদান দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে ভারতীয় হাইকমিশন। পরে ২০১৫ সালে নরসিংদী জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের মধ্যে বাড়িটি সংরক্ষণ ও একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণের চুক্তি হয়। এরপর সরকারের নিয়ন্ত্রণে ও দিক নির্দেশনায় সংরক্ষণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদানও পায় ঐতিহ্য অন্বেষণ। পুরোনো চেহারায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়িতে করা হয়েছে একটি জাদুঘর। এখানে তুলে রাখা হয়েছে ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও তার লেখা বই। আর যা দেখতে প্রতিনিয়তই ভিড় জমাচ্ছে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
ঢাকা থেকে ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়িতে আসতে হলে গুলিস্থান থেকে মেঘালয় বাসে উঠে নরসিংদীর পাঁচদোনা বাজারে নামতে হবে। আর যদি সিলেট অঞ্চলের কোনো বাসে আসেন তাহলেও পাঁচদোনা বাজারেই নামতে হবে। মেঘালয় বাসের ভাড়া ১২০ টাকা। আর সিলেট অঞ্চলের বাসে এলে তা আরও বেশি বা কম হতে পারে। তবে ভাড়া খুব বেশি হবে না। ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি যাদুঘর সপ্তাহে ৬ দিন খোলা থাকে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। এ বিষয়টি মাথায় রেখে ভ্রমণ পিপাসু বা দর্শনার্থীরা অতি সহজেই আসতে পারেন এ স্থানটিতে।
ঢাকা থেকে ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়িতে ঘুরতে আসা তন্ময় হাসান বলেন, বই পুস্তকে গিরিশ চন্দ্র সেনের নাম পড়েছি। বাস্তবে গিরিশ চন্দ্র সেনকে প্রত্যক্ষ করার জন্য এখানে এসেছি। এখানে এসেই ভালো লেগেছে। জাদুঘর করার কারণে আমরা এই মহান ব্যক্তির অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি।
বর্তমানে গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক কাওসারুল হক কানন বলেন, ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি এ অঞ্চলে হওয়ায় এটি একটি পর্যটন নগর হতে পারে। আর এখানে একটা পর্যটন নগর হলে এ অঞ্চলের মানুষ অনেক লাভবান হবে। তবে আগের দর্শনার্থী সমাগমের তুলনায় এখন অনেক বেশি। আশা করছি ভবিষ্যতে এটা আরও বাড়বে।
ঐতিহ্য অন্বেষণ নির্বাহী পরিচালক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভাই গিরিশ চন্দের বাড়ির মেরামত ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাড়িটিতে গিরিশ চন্দ্রের জীবন ও গবেষণা নিয়ে জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে গিরিশ চন্দ্র সেনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও লেখা বই স্থান পাবে। বাড়ির সম্মুখভাগে গিরিশ চন্দ্রের সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। আগামী প্রজন্মের কাছে ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়িটি একটি দর্শনীয় স্থান হবে বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৯
এসএইচ